(১৯৭৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সকল সংশোধনীর প্রভাব, বিতর্ক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট)
বাংলাদেশের সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইনি দলিল, যা রাষ্ট্রের মূলনীতি, নাগরিক অধিকার ও শাসনব্যবস্থা নির্ধারণ করে। ১৯৭২ সালে প্রণয়নের পর থেকে ১৭টি সংশোধনী এই দলিলকে রূপান্তরিত করেছে, যার প্রতিটিই এই দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গভীর প্রভাব ফেলেছে। আমরা আজকে প্রতিটি সংশোধনীর পেছনের কারন, প্রভাব ও বিভিন্ন বিতর্ক সমূহ খতিয়ে দেখার চেষ্টা করবো।
Table of Contents
Toggle১ম সংশোধনী (১৯৭৩): যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আইনি ভিত্তি
মূল বিষয়: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িতদের বিচারের জন্য সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ সংশোধন।
বিস্তারিত প্রভাব:
ট্রাইব্যুনাল গঠন: এই সংশোধনীর মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচারের পথ তৈরি হয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT) গঠিত হয়।
মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ: অভিযুক্তদের জামিনের অধিকার স্থগিত করা হয়, যা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমালোচনার কারণ হয় (আমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ১৯৭৩)।
রাজনৈতিক বিভাজন: আওয়ামী লীগ এটাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধারে ভূমিকা উল্লেখ করলেও বিএনপি-জামায়াত জোট এটিকে “প্রতিশোধমূলক” বলে সমালোচনা করে।
বিতর্ক: সংবিধানের “আইনের শাসন ও মৌলিক অধিকার” নীতির সাথে সাংঘর্ষিক।
২য় সংশোধনী (১৯৭৩): জরুরি অবস্থার অপব্যবহার
মূল বিষয়: জরুরি অবস্থা জারি করে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা বৃদ্ধি।
বিস্তারিত প্রভাব: ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ: রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মৌলিক অধিকার স্থগিতসহ যেকোনো আইন প্রণয়ন করতে পারতেন।
দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবঃ ২০০৭-২০০৮ সালের সংকট- তত্ত্বাবধায়ক সরকার জরুরি অবস্থা জারি করে ২ বছর দেশ চালায়। এ সময় ১.৫ লক্ষ মানুষ গ্রেফতার হন (হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ২০০৮)।
অর্থনৈতিক ধস: জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬% থেকে ৫%-এ নেমে আসে (বাংলাদেশ ব্যাংক, ২০০৮)।
বিতর্ক: জরুরি অবস্থাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার।
৩য় সংশোধনী (১৯৭৪): ছিটমহল বিনিময়
মূল বিষয়: ভারতের সাথে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়ের অনুমোদন।
বিস্তারিত প্রভাব-
মানবিক সাফল্য: ৫০,০০০ মানুষ নাগরিকত্ব পায়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রসারিত হয়।
২০১৫ সালের চূড়ান্ত বিনিময়: মোদি-হাসিনা চুক্তির মাধ্যমে ৬৮ বছরের সমস্যার সমাধান হয়।
ভূ-রাজনৈতিক সমালোচনা: বাংলাদেশ ১১১টি ছিটমহল ছেড়ে দিয়ে ভারতের কাছ থেকে পায় মাত্র ৫১টি (ড. কামাল হোসেন, “বাংলাদেশের সাংবিধানিক ইতিহাস”)।
বিতর্ক: অসম বিনিময়কে “ভারতের সাথে দুর্বল কূটনীতি” বলা হয়।
৪র্থ সংশোধনী (১৯৭৫): একদলীয় শাসন (বাকশাল)
মূল বিষয়: সংসদীয় ব্যবস্থা বাতিল করে রাষ্ট্রপতিশাসিত একদলীয় সরকার চালু।
বিস্তারিত প্রভাব-
গণতন্ত্রের মৃত্যু: সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয়, শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশাল একমাত্র বৈধ দল হয়।
মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ: মাত্র ৪টি সংবাদপত্র চালুর অনুমতি দেওয়া হয়।
১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ: ১৫ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটে, যা বাকশালের অদক্ষতার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত (ড. অনুসূয়া সাহা, “বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ইতিহাস”)।
বিতর্ক: “গণতন্ত্র হত্যার প্রথম ধাপ” হিসেবে ইতিহাসে স্বীকৃত।
৫ম সংশোধনী (১৯৭৯): জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসন বৈধতা
মূল বিষয়: ১৯৭৫ সালের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা জিয়াউর রহমানের শাসনকে বৈধতা দেওয়া।
বিস্তারিত প্রভাব-
সামরিক শাসনের নজির:পরবর্তীতে এরশাদও ১৯৮২ সালে একই পদ্ধতিতে ক্ষমতা দখল করেন।
রাজনৈকিত দল গঠন: জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (BNP) গঠন করেন, যা আজও বাংলাদেশের একটি অন্যকম জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল।
২০১০ সালে বাতিল: সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, “সামরিক শাসন সংবিধানবিরোধী” (মামলা নং: ৫/২০১০)।
বিতর্ক: সংবিধানে সামরিক হস্তক্ষেপের বৈধতা দেওয়াকে “গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা” বলা হয়।
৬ষ্ঠ সংশোধনী (১৯৮১): রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নিয়ম পরিবর্তন
মূল বিষয়: রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীদের নির্বাচনের আগে পদত্যাগ বাধ্যতামূলক নয়।
বিস্তারিত প্রভাব-
ক্ষমতার অপব্যবহার: রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় পুনর্নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকারি সম্পদ ব্যবহার করা এবং র্নির্বাচনকে প্রভাবিত করা।
বিতর্ক: “নির্বাচনের সততা নষ্ট” – এই সংশোধনীকে সংবিধানের ৭(খ) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন বলে বিশিষ্ঠ জনের মতামত।
৭ম সংশোধনী (১৯৮৬): এরশাদের সামরিক শাসন বৈধতা
মূল বিষয়: সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ১৯৮২ সালের ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দেওয়া।
বিস্তারিত প্রভাব:
গণঅসন্তোষ বৃদ্ধি: ১৯৯০ সালের গণআন্দোলনে এরশাদ পদত্যাগে বাধ্য হন।
রাজনৈতিক দল গঠন: এরশাদ জাতীয় পার্টি নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন, যা এখনও রাজনীতির মাঠে সক্রিয়।
২০১০ সালে বাতিল: আদালত রায় দেয়, “সামরিক শাসন কখনো বৈধ নয়”।
বিতর্ক: সংবিধানকে “সামরিক শাসকের হাতিয়ার” হিসেবে ব্যবহারের নজির।
৮ম সংশোধনী (১৯৮৮): ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম
মূল বিষয়:সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা।
বিস্তারিত প্রভাব:
ধর্মীয় বিভাজন: সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর হামলা বৃদ্ধি পায় (মাইনরিটি রাইটস গ্রুপ, ২০২০)।
শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন: মাদ্রাসা শিক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
বিতর্ক: সংবিধানের মূল স্তম্ভ “ধর্মনিরপেক্ষতা” এর সাথে সাংঘর্ষিক।
৯ম সংশোধনী (১৯৮৯): রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সরাসরি ভোট
মূল বিষয়: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সরাসরি ভোট পদ্ধতি চালু।
বিস্তারিত প্রভাব:
ব্যবহারিক ব্যর্থতা: ১৯৯১ সালে সংসদীয় সরকার ফিরে এলে সংশোধনীর প্রাসঙ্গিকতা হারায়।
বিতর্ক: সময়ের সঙ্গে বেমানান এবং অপ্রয়োজনীয় সংশোধনী।
১০ম সংশোধনী (১৯৯০): নারী আসন সংরক্ষণ
মূল বিষয়: সংসদে ৩০টি সংরক্ষিত নারী আসন চালু।
বিস্তারিত প্রভাব:
প্রতীকী প্রতিনিধিত্ব: নারীর উপস্থিতি ২% থেকে ১০%-এ ওঠে, কিন্তু মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় দলীয় প্রভাব।
স্থানীয় সরকারে প্রভাব: উপজেলা পর্যায়ে নারীদের সরাসরি নির্বাচনের দাবি জোরালো হয়।
বিতর্ক: এটাকে প্রিতিনিধিত্ব নয়, দলীয় কোটা বলে আলোচিত হয়।
১১তম সংশোধনী (১৯৯১): বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের রাষ্ট্রপতি পদ
মূল বিষয়: প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদকে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি করা।
বিস্তারিত প্রভাব:
নিরপেক্ষ নির্বাচন: ১৯৯১ সালে প্রথম অবাধ সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
বিতর্ক: “বিচার বিভাগের রাজনীতিকরণ” বলে আলোচনা সমালোচনা।
১২তম সংশোধনী (১৯৯১): সংসদীয় সরকার পুনঃপ্রবর্তন
মূল বিষয়: প্রধানমন্ত্রীকে সরকারে প্রধান হিসাবে ঘোষনা করা হয় এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে সীমিত করা হয়।
বিস্তারিত প্রভাব:
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার: ১৯৯১ সালের পর থেকে এটিই বাংলাদেশের মূল শাসনব্যবস্থা।
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বৃদ্ধি: সংসদ ভেঙে দেওয়া, মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়।
বিতর্ক: প্রধানমন্ত্রীর হাতে “অতিরিক্ত ক্ষমতা” হওয়ায় ভারসাম্যতার প্রশ্ন ওঠে।
১৩তম সংশোধনী (১৯৯৬): তত্ত্বাবধায়ক সরকার
মূল বিষয়: নির্বাচন পরিচালনার জন্য অরাজনৈতিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন।
বিস্তারিত প্রভাব:
সুষ্ঠ নির্বাচন: ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়।
২০১১ সালে বাতিল: ততকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একে “অসাংবিধানিক” বলে বাতিল করেন।
রাজনৈতিক সংকট: ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিরোধী দল অংশ নেয়নি।
বিতর্ক: বাতিলের ফলে “একদলীয় শাসনের পথ প্রশস্ত” হয়েছে বলে সমালোচনা হয় এবং নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
১৪তম সংশোধনী (২০০৪): নারী আসন ৪৫-এ উন্নীত
মূল বিষয়: সংসদে নারী আসন ৩০ থেকে ৪৫-এ উন্নীত করা।
বিস্তারিত প্রভাব:
প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি: নারীর উপস্থিতি ১৫%-এ পৌঁছায়, কিন্তু মনোনয়ন প্রক্রিয়াএকই ( কোটিা ভিত্তিক ) ।
স্থানীয় সরকারের মডেল উপেক্ষিত: উপজেলা পর্যায়ে সরাসরি নির্বাচিত নারী নেতাদের অভিজ্ঞতা জাতীয় সংসদে কাজে লাগানো হয়নি।
বিতর্ক: “মনোনীত নারী” হওয়ায় প্রকৃত ক্ষমতায়ন উপেক্ষিত ।
১৫তম সংশোধনী (২০১১): তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল
মূল বিষয়: নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল।
বিস্তারিত প্রভাব:
রাজনৈতিক অস্থিরতা: ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করে আ. লীগ।
আন্তর্জাতিক সমালোচনা: ইইউ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
বিতর্ক: গণতন্ত্রকে উপেক্ষা করা হয়েছে – বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ।
১৬তম সংশোধনী (২০১৪): বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে
মূল বিষয়: বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফেরত দেওয়া।
বিস্তারিত প্রভাব:
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হ্রাস: এই সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার সংসদের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের পথ তৈরি করে, যা বিচারিক স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলে।
সুপ্রিম কোর্টের রায় (২০১৭): আদালত এই সংশোধনীকে “অসাংবিধানিক” ঘোষণা করে এবং রায়ে উল্লেখ করে, “ক্ষমতার বিভাজন নীতির লঙ্ঘন হয়েছে”। রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:সরকারি দল এটিকে “জনগণের প্রতিনিধিত্বের অধিকার” বলে দাবি করলেও বিরোধী দল ও সুশীল সমাজ একে “গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক এবং হতাশাজনক” বলে সমালোচনা করে।
বিতর্ক: “বিচার বিভাগের উপর নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণ” – সংবিধানের মূলনীতি লঙ্ঘনের অভিযোগ।
১৭তম সংশোধনী (২০১৮): সংসদে নারী আসন ৫০-এ উন্নীত
মূল বিষয়: জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা।
বিস্তারিত প্রভাব:
প্রতীকী অগ্রগতি: সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে ২০%-এ পৌঁছায়, তবে এই আসনগুলোতে সরাসরি নির্বাচন না হওয়ায় বাস্তব ক্ষমতায়ন সীমিত।
মনোনয়ন প্রক্রিয়ার দুর্বলতা: দলীয় নেতাদের ইচ্ছায় নারী সদস্যদের নির্বাচন করা হয়, যা তাদের স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা খর্ব করে।
স্থানীয় সরকারের সাথে বৈসাদৃশ্য: উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদে সরাসরি নির্বাচিত নারী নেতাদের মডেল জাতীয় সংসদে অনুসরণ করা হয়নি।
বিতর্ক: নির্বাচিত নারী নয়, মনোনীত নারী” – প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্বের অভাব।
এক নজরে দেখে নেই কোন সরকারের আমলে সংবিধানের কোন কোন সংশোধন হয়েছেঃ
১. শেখ মুজিবুর রহমান সরকার (১৯৭২-১৯৭৫): ১ম সংশোধনী (১৯৭৩)-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। ২য় সংশোধনী (১৯৭৩)- জরুরি অবস্থার বিধান। ৩য় সংশোধনী (১৯৭৪)- ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময়। ৪র্থ সংশোধনী (১৯৭৫)- একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা চালু।
২. সামরিক শাসন ও জিয়াউর রহমান সরকার (১৯৭৫-১৯৮১): ৫ম সংশোধনী (১৯৭৯): জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসন বৈধতা।
৩. সামরিক শাসন ও এরশাদ সরকার (১৯৮২-১৯৯০): ৬ষ্ঠ সংশোধনী (১৯৮১)- রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি। ৭ম সংশোধনী (১৯৮৬)-এরশাদের সামরিক শাসন বৈধতা। ৮ম সংশোধনী (১৯৮৮)- ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা। ৯ম সংশোধনী (১৯৮৯)- রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সরাসরি ভোট।
৪. বিএনপি সরকার (১৯৯১-১৯৯৬): ১০ম সংশোধনী (১৯৯০)- সংসদে নারী আসন সংরক্ষণ (৩০টি)। ১১তম সংশোধনী (১৯৯১)- বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের রাষ্ট্রপতি পদ। ১২তম সংশোধনী (১৯৯১)- সংসদীয় সরকার পুনঃপ্রবর্তন।
৫. আওয়ামী লীগ সরকার (১৯৯৬-২০০১): ১৩তম সংশোধনী (১৯৯৬)-তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা।
৬. বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার (২০০১-২০০৬): ১৪তম সংশোধনী (২০০৪)- নারী আসন ৪৫-এ উন্নীত।
৭. আওয়ামী লীগ সরকার (২০০৯-২০২৪ এর মাঝামাঝি):১৫তম সংশোধনী (২০১১) তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল। ১৬তম সংশোধনী (২০১৪):* বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে। ১৭তম সংশোধনী (২০১৮)- নারী আসন ৫০-এ উন্নীত।
নোটসঃ সামরিক শাসনকালে (১৯৭৫-১৯৯০)- বেশিরভাগ সংশোধনী হয়েছে ক্ষমতাসীন সামরিক শাসকদের মাধ্যমে। গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর মধ্যে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ প্রধানভাবে সংশোধনী এনেছে।
সংবিধানের সংস্কার—সময়ের দাবি, জনগণের প্রত্যাশা
বাংলাদেশের সংবিধান শুধু একটি আইনি নথি নয়; এটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন, রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো এবং জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছার প্রকাশ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সংবিধানে যুক্ত হওয়া বিভিন্ন সংশোধনী কখনো গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়েছে, আবার কখনো সেটিকে সংকুচিত করেছে। ইতিহাস সাক্ষী, কিছু সংশোধনী (যেমন ১২তম ও ১৩তম) জনগণের ক্ষমতায়নের পথ সুগম করেছে, আবার কিছু সংশোধনী (যেমন ৪র্থ, ৫ম ও ৭ম) রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
তবে একটি রাষ্ট্রের সংবিধান কখনো কোনো নির্দিষ্ট দল বা গোষ্ঠীর সম্পত্তি হতে পারে না। এটি হতে হবে জনগণের সম্মিলিত ইচ্ছার প্রতিফলন, যেখানে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত থাকবে। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সংবিধানের সার্বজনীন সংস্কার জরুরি।আমরা যদি সত্যিই একটি গণতান্ত্রিক, ন্যায়সঙ্গত ও স্থিতিশীল রাষ্ট্র গঠন করতে চাই, তবে সংবিধানের সংস্কার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার না বানিয়ে, একটি জনবান্ধব সংস্কার করতে হবে। সংবিধান যখন দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে জনতার অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে গঠিত হবে, তখনই এটি সত্যিকারের গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করবে।
রেফারেন্স:
১. বাংলাদেশের সংবিধান (আসল পাঠ্য ও সংশোধনীসমূহ), আইন মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
২. ড. রওনক জাহান, বাংলাদেশের রাজনীতি: ১৯৭১-২০২১ (ঢাকা: ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ২০২২)।
৩. সুপ্রিম কোর্টের রায়: *বাংলাদেশ আইনজীবী কাউন্সিল বনাম বাংলাদেশ সরকার (৫ম সংশোধনী বাতিল)।
৪. বাংলাদেশ ব্যাংক, *অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০০৮।
৫. ড. কামাল হোসেন, “বাংলাদেশ: স্টেট অ্যান্ড ডেমোক্রেসি” (ঢাকা ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০১৫)।
৬. হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রিপোর্ট (২০০৮), “জরুরি অবস্থায় মানবাধিকার লঙ্ঘন”।
৭. রয়টার্স, “বাংলাদেশ নির্বাচন: আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া” (২০১৪)।
1 Comment
সংবিধানের সংশোধনী বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পেলাম।