নারীর ক্ষমতায়ন ও আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৫
আন্তর্জাতিক নারী দিবস প্রতি বছর ৮ মার্চ নারীর অর্জন, অধিকার ও সমতার সংগ্রামকে স্বীকৃতি দিতে উদযাপিত হয়। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য “অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন” বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঘোষিত হয়েছে। এই থিমের মূল লক্ষ্য হলো:
# নারী ও কন্যার মৌলিক অধিকার সুরক্ষা।
# লিঙ্গবৈষম্য দূর করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষেত্রে সমতা নিশ্চিতকরণ।
# প্রযুক্তি ও নীতির সমন্বয়ে নারীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন।
# কন্যা শিশুর পুষ্টি, শিক্ষা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে টেকসই উন্নয়ন।
এই ব্লগে আমরা আলোচনা করব বাংলাদেশের আইনি কাঠামো, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট, চলমান চ্যালেঞ্জ এবং নারী ও কন্যার উন্নয়নে প্রযুক্তির ভূমিকা।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৫: প্রেক্ষাপট ও প্রতিপাদ্য:
১.১ নারী দিবসের ঐতিহাসিক পটভূমি: নারী দিবসের সূচনা ১৯০৮ সালে নিউইয়র্কের কাপড়শ্রমিক নারীদের বিক্ষোভ থেকে। ১৯১১ সালে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে জার্মানি, ডেনমার্ক ও সুইজারল্যান্ডে দিবসটি পালিত হয়। ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘের স্বীকৃতির পর থেকে এটি বৈশ্বিকভাবে নারীর অধিকার, ভোটাধিকার ও শ্রমিক অধিকারের প্রতীক। ২০২৫ সালে এই দিনটি নারী ও কন্যার উন্নয়নে প্রযুক্তি, শিক্ষা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের সমন্বয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
১.২. ২০২৫ সালের থিমের তাৎপর্য: বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ঘোষিত থিমটির ৪টি স্তম্ভ:
১. অধিকার: নারীর মৌলিক অধিকার (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সম্পত্তির মালিকানা)। কন্যার অধিকার (শিশুবিবাহ ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধ)। উদাহরণ: বাংলাদেশে নারী জমির মালিকানার হার মাত্র ৪৪% (BBS, ২০২৩)।
২. সমতা: কর্মক্ষেত্রে বেতন বৈষম্য দূরীকরণ। রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি। উদাহরণ: স্থানীয় সরকারে ৩৩% নারী কোটা (ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন)।
৩. ক্ষমতায়ন: নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা (ঋণ সুবিধা, উদ্যোক্তা উন্নয়ন)। ডিজিটাল লেনদেনে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি। উদাহরণ: bKash-এর ৬০% ব্যবহারকারী নারী।
৪. কন্যার উন্নয়ন:মাধ্যমিক শিক্ষায় কন্যার প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণ। শিশুপুষ্টি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা। উদাহরণ: মাধ্যমিকে নারী শিক্ষার হার ৮২% (BANBEIS, ২০২৩)।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট: আইন, অর্জন ও বাস্তবতা
২.১ সংবিধান ও নারী অধিকার: অনুচ্ছেদ ১৯(১): নারী-পুরুষের সমান সুযোগের নিশ্চয়তা। অনুচ্ছেদ ২৮(২): নারীর উন্নয়নে বিশেষ বিধান প্রণয়নের ক্ষমতা। (বাংলাদেশের সংবিধান)
জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১: নারীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়নের রূপরেখা।
২.২ শ্রম আইন ও নারী সুরক্ষা
মাতৃত্বকালীন ছুটি: সরকারি চাকরিতে ৬ মাস, বেসরকারিতে ৪ মাস (শ্রম আইন ২০০৬)।
যৌন হয়রানি প্রতিরোধ: কর্মক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্ট কমিটি বাধ্যতামূলক (ধারা ৩৩২)।
সমমজুরি: নারী-পুরুষের সমান কাজে সমান বেতন (ধারা ৩৪৫)।
২.৩ বাংলাদেশের অর্জন: পরিসংখ্যান: শিক্ষা: নারী সাক্ষরতার হার ৭৫% (BBS, ২০২৩)। অর্থনীতি: RMSE খাতে ৪৫ লক্ষ নারী কর্মরত (BGMEA, ২০২৪)। ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি: ৫৫% নারী মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করেন (বিবিএস, ২০২৩)।
কর্মক্ষেত্রে নারীর মুখোমুখি ১০টি চ্যালেঞ্জ
৩.১ মজুরি বৈষম্য: বৈশ্বিক পরিস্থিতি- নারীরা পুরুষের তুলনায় ১৬% কম আয় করে (ILO, ২০২৩)। বাংলাদেশ- গার্মেন্টসে নারী শ্রমিকের গড় মজুরি ১২,৫০০ টাকা, পুরুষের ১৫,০০০ টাকা (BBS, ২০২৪)।
৩.২ যৌন হয়রানি: ৭০% কর্মজীবী নারী হয়রানির শিকার (আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ২০২৩)। মাত্র ১০% অভিযোগ আইনি প্রক্রিয়ায় যায় (মানবাধিকার কমিশন)।
৩.৩ মাতৃত্বকালীন বৈষম্য: ৪০% বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ছুটি পুরোপুরি মানা হয় না। ৬৮% নারী প্রথম সন্তানের পর চাকরি ছাড়েন (UNICEF, ২০২৪)।
৩.৪ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব: ৩০% নারী কর্মী পেশাগত প্রশিক্ষণ পান না (BIDS, ২০২৩)।
৩.৫ রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের ঘাটতি: জাতীয় সংসদে নারীর আসন ২০% (সংরক্ষিত), সরাসরি নির্বাচনে মাত্র ৬%।
৩.৬ ডিজিটাল বৈষম্য: গ্রামীণ নারীদের ৬৫% ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত (A2I, ২০২৪)।
৩.৭ স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা: গ্রামাঞ্চলে ৪০% নারী প্রসবপূর্ব চেকআপ পান না (UNFPA, ২০২৩)।
৩.৮ শিশু পরিচর্যা সুবিধার অভাব: মাত্র ৫% বেসরকারি অফিসে ডে-কেয়ার সেন্টার আছে (UNICEF)।
৩.৯ সামাজিক কুসংস্কার: ৪০% পুরুষ মনে করেন “নারীর মূল দায়িত্ব সংসার” (BIDS সার্ভে, ২০২৩)।
৩.১০ পরিবহন নিরাপত্তাহীনতা: ৬৫% নারী পাবলিক ট্রান্সপোর্টে অস্বস্তি বোধ করেন (BRAC রিপোর্ট)।
বৈশ্বিক সাফল্যের গল্প: রোল মডেল
৪.১ রুয়ান্ডা: লিঙ্গ সমতায় বিশ্ব নেতা: সংসদের ৬১% আসনে নারী প্রতিনিধি (UNDP, ২০২৪)। নারী শিক্ষার হার ৯৫%।
৪.২ আইসল্যান্ড: সমবেতন নীতি: ২০২৫ সালে বেতন বৈষম্য শূন্যের কোঠায় (WEF)। ১৯৭৫ সালে ৯০% নারী কর্মবিরতির মাধ্যমে সমঅধিকার আদায়।
৪.৩ ভারত: নারী উদ্যোক্তাদের উত্থান: ২০২০-২০২৫: নারী স্টার্টআপ ২২% বৃদ্ধি (NITI Aayog)। সফল উদ্যোক্তা: Nykaa (ফাল্গুনী নায়ার), Zivame (রিচা কর)।
প্রযুক্তি: নারীর ক্ষমতায়নের হাতিয়ার
৫.১. ফিনটেক এমপাওয়ারমেন্ট : bKash:** ৬০% নারী ব্যবহারকারী। ইন্ডিয়ার Paytm: ৩ কোটি নারী ডিজিটাল লেনদেন করেন।
৫.২ মেন্টাল হেলথ প্ল্যাটফর্ম: ভারতের “সঙ্গিনী” অ্যাপ: ৫ লক্ষ নারী কাউন্সেলিং সুবিধা পেয়েছেন। বাংলাদেশের “মনোযোগ” হেল্পলাইন: ২০২৪ সালে ২৫,০০০ নারী পরামর্শ নেন।
৫.৩ ই–কমার্সে নারীর অংশগ্রহণ : Daraz: ৪০% নারী বিক্রেতা (২০২২-২০২৫)। Etsy: ৮৬% দোকান নারী মালিকানাধীন।
সমাধানের রোডম্যাপ: ২০২৫-২০৩০
৬.১ সরকারি পদক্ষেপ: স্কিল ডেভেলপমেন্ট: ১০ লক্ষ নারীকে প্রশিক্ষণ (Google-এর “Women Will” মডেলে)। নারী বাজেট: ২০২৪-২৫ এ নারী উন্নয়নে ৩০.৮২% বরাদ্দ। ডিজিটাল লিটারেসি: গ্রামীণ নারীদের জন্য ইন্টারনেট প্রশিক্ষণ ক্যাম্প।
৬.২ প্রতিষ্ঠান ও কর্পোরেট দায়িত্ব: ফ্লেক্সিবল ওয়ার্কিং: টাটা স্টিলের মডেলে রিমোট কাজের সুযোগ। ডাইভারসিটি কোটা: মালয়েশিয়ার মতো বোর্ডে ৩০% নারী বাধ্যতামূলক।
৬.৩ সামাজিক আন্দোলন: সমাজের প্রতিটি স্তরে পরিবর্তনের অঙ্গীকার**
ক. যুব নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ: ইয়ুথ এমপাওয়ারমেন্ট ফোরাম: বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা “নারী অধিকার চাই” ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় ১০ লক্ষ পোস্ট শেয়ার করেছেন (২০২৪)। কন্যা শিশুদের জন্য স্কলারশিপ: “আলোর পথে কন্যা” প্রকল্পের মাধ্যমে ৫,০০০ মেয়েকে মাধ্যমিক শিক্ষা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
খ. গ্রামীণ নারীর ডিজিটাল সচেতনতা: কমিউনিটি রেডিও: ঠাকুরগাঁওয়ের “নারী কণ্ঠ” রেডিওতে সাইবার সিকিউরিটি ও ডিজিটাল লিটারেসি সম্পর্কে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান। মোবাইল লাইব্রেরি: গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় প্রতিমাসে ২০০ গ্রামে নারীদের জন্য টেক ওয়ার্কশপ।
গ. শিল্প ও সংস্কৃতির মাধ্যমে জাগরণ:ম্যুরাল আর্ট: ঢাকার গুলশানে “নারী অধিকার” বিষয়ক ১০টি ম্যুরাল তৈরি করা হয়েছে, যা মাসে ৫০,০০০ দর্শক দেখেন। নাট্যাভিনয়: “নারী কথা” নাট্যদল দেশজুড়ে ১০০টি অভিনয় করেছে, যেখানে কর্মক্ষেত্রে নারীর সংগ্রাম ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ঘ. পুরুষদের অংশগ্রহণ: BabaInitiative: বাংলাদেশে ২০,০০০ পুরুষ বাবার দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার শপথ নিয়েছেন। পুরুষ আলোচনা চক্র:BRAC-এর “পুরুষের কথা” প্রোগ্রামে ৫০,০০০ পুরুষ লিঙ্গ সমতা বিষয়ে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন।
ঙ. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: গ্লোবাল ফেমিনিস্ট ফান্ড: বাংলাদেশের ২০০টি এনজিও এই ফান্ড থেকে অনুদান পেয়েছে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে। UNFPA-এর অংশীদারিত্ব:কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৫টি নারী সুরক্ষা সেন্টার স্থাপন।
২০২৫-এ আমাদের যৌথ অঙ্গীকার ও টেকসই পদক্ষেপ: ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য –“অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন” কেবল একটি স্লোগান নয়—এটি বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের জন্য একটি -পরিবর্তনের রূপরেখা। এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, নারীর অগ্রযাত্রা শুধু অর্থনৈতিক সূচকেই নয়, সামাজিক ন্যায়বিচার, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং প্রযুক্তিগত অন্তর্ভুক্তির সমন্বয়ে পরিমাপ করতে হবে। নিচে এই অগ্রযাত্রাকে টেকসই করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও অঙ্গীকারের বিস্তারিত দিকগুলো তুলে ধরা হলো:
১. নারীর অধিকার: শেকড় থেকে শিখরে:
ক. আইনের প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ: বাংলাদেশের সংবিধান ও শ্রম আইনে নারীর অধিকার স্পষ্ট, কিন্তু গ্রামীণ আদালত বা কর্মক্ষেত্রে এর বাস্তবায়ন দুর্বল। প্রতিটি ইউনিয়নে “মোবাইল লিগ্যাল এইড ক্যাম্প” চালু করে নারীদের আইনি সচেতনতা বাড়াতে হবে।
খ. কন্যার অধিকার রক্ষা: শিশুবিবাহ রোধে স্থানীয় নেতা, ইমাম ও শিক্ষকদের নিয়ে কমিউনিটি ভিজিল্যান্স টিম গঠন। উদাহরণ: ২০২৪ সালে রংপুরে এই মডেলের মাধ্যমে শিশুবিবাহ ৪০% কমেছে (UNICEF)।
২. সমতা: শূন্য থেকে শতভাগ:
ক. বেতন বৈষম্য দূরীকরণ: সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে **গোপন বেতন কাঠামো** (Salary Transparency) চালু করা। আইসল্যান্ডে এই পদ্ধতিতে বেতন বৈষম্য ১৫% থেকে ৩%-এ নেমেছে (WEF, ২০২৪)।
খ. রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব: সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ২০% থেকে বাড়িয়ে ৩৩% করা এবং সরাসরি নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের জন্য ৩০% ফান্ডিং বরাদ্দ।
৩. ক্ষমতায়ন: প্রযুক্তি ও শিক্ষার সমন্বয়:
ক. ডিজিটাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট: প্রতিটি উপজেলায় -ডিজিটাল লার্নিং হাব স্থাপন, যেখানে নারীরা কোডিং, ডিজিটাল মার্কেটিং ও ফিনটেক সম্পর্কে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ পাবেন।
খ. নারী উদ্যোক্তা তহবিল: বাংলাদেশ ব্যাংকের “নারী উদ্যোক্তা ফাইন্যান্সিং স্কিম” এর সুদহার ৪% থেকে কমিয়ে ২% করা (বাংলাদেশ ব্যাংক, ২০২৪)।
৪. কন্যার উন্নয়ন: ভবিষ্যতের বিনিয়োগ:
ক, স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুষ্টিকর মিড-ডে মিল চালু করে কন্যার স্কুল ড্রপআউট রেট ২০% কমানো (জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২৩)।
খ. স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্রাপ্যতা: প্রতিটি স্কুল ও কলেজে বিনামূল্যে স্যানিটারি প্যাড ডিসপেন্সার স্থাপন (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প “সুরক্ষা”)।
৫. প্রযুক্তি: অন্তর্ভুক্তির হাতিয়ার:
ক. AI-ভিত্তিক সুরক্ষা: বাংলাদেশে “নারী সুরক্ষা” অ্যাপ চালু করা হয়েছে, যা জরুরি অবস্থায় পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় নেতাদের সাথে অটো-কানেক্ট করে। ২০২৪ সালে এই অ্যাপ ২ লক্ষ নারী ডাউনলোড করেছেন (ডিজিটাল বাংলাদেশ মন্ত্রণালয়)।
খ. গ্রামীণ নারীর ইন্টারনেট এক্সেস: “কমিউনিটি ওয়াইফাই জোন” প্রকল্পের মাধ্যমে ৫,০০০ গ্রামে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়া হয়েছে (A2I)।
৬. সমাজের প্রতিটি স্তরে অংশীদারিত্ব:
ক. পুরুষদের সম্পৃক্ততা: “হীরা আলো” প্রকল্পে ১ লক্ষ পুরুষ নারী অধিকার বিষয়ক ওয়ার্কশপে অংশ নিয়েছেন, যেখানে তারা রান্না, শিশু লালন ও বাজেটিংয়ে সমদায়িত্ব নেওয়ার প্রশিক্ষণ পেয়েছেন (BRAC)।
খ. ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা: মসজিদ, মন্দির ও গির্জায় নারী শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক খুতবা/বক্তব্য প্রদান।
আমাদের অঙ্গীকার:
ক. ব্যক্তিগত স্তরে: প্রত্যেকে নিজ পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতার চর্চা করব—মেয়েদের শিক্ষা, ছেলেদের গৃহস্থালি কাজে উৎসাহিত করব।
খ. সমষ্টিগত স্তরে: “একটি নারী, একটি গল্প” ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলায় নারী উদ্যোক্তাদের সাফল্য প্রচার করব।
গ.বৈশ্বিক স্তরে: UN Women-এর “জেনারেশন ইক্যুয়ালিটি” ফোরামে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করব।
পরিশেষে:
২০২৫ সালের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য আমাদের শেখায়—নারীর উন্নয়ন মানে শুধু একটি লিঙ্গের উন্নয়ন নয়, গোটা মানবজাতির উন্নয়ন। আসুন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ি, যেখানে কন্যা শিশুটি স্কুল ব্যাগ হাতে স্বপ্ন দেখবে বিজ্ঞানী হওয়ার, যৌন হয়রানির শিকার নারীটি নিঃসংকোচে অভিযোগ জানাবে, আর একজন গ্রামীণ নারী মোবাইল অ্যাপে ক্লিক করেই বিশ্ব বাজারে তার হস্তশিল্প বিক্রি করবেন। এই অঙ্গীকারই হোক নারী দিবস ২০২৫-এর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি।
তথ্যসূত্র:
১। UNICEF. (২০২৪). *Child Marriage Reduction in Rangpur*.
২। বাংলাদেশ ব্যাংক. (২০২৪). *নারী উদ্যোক্তা তহবিল নীতিমালা*.
৩। BRAC. (২০২৪). *পুরুষদের অংশগ্রহণে লিঙ্গ সমতা প্রকল্প*.
৪। ডিজিটাল বাংলাদেশ মন্ত্রণালয়. (২০২৪). *নারী সুরক্ষা অ্যাপ ব্যবহার পরিসংখ্যান*.
৫। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS). (২০২৩). *নারী শিক্ষা ও কর্মসংস্থান পরিসংখ্যান*.
৬। BRAC. (২০২৪). *পুরুষের অংশগ্রহণে লিঙ্গ সমতা রিপোর্ট*.
৭। গ্লোবাল ফেমিনিস্ট ফান্ড. (২০২৫). *বাংলাদেশের এনজিও তালিকা*.
৮। গ্রামীণফোন. (২০২৪). *ডিজিটাল লিটারেসি প্রোগ্রামের অগ্রগতি*.