চেক ডিজওনার বা চেক প্রত্যাখ্যাত হওয়া আজকাল খুবই পরিচিত একটি ঘটনা। অনেকেই হয়তো জানেন যে, চেক ডিজওনার হলে সংশ্লিষ্ট আইনের (বিশেষ করে হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন, ১৮৮১ এর ১৩৮ ধারা) আওতায় মামলা করা যায় এবং মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে জেল বা জরিমানা দুটোই হতে পারে। কিন্তু একটা প্রশ্ন অনেকের মনেই ঘুরপাক খায় – আসামী যদি মামলায় জেল খেটে ফেলে, তাহলে কি পাওনাদার তার টাকা ফেরত পাবে? নাকি জেল খাটার মধ্য দিয়েই সব শেষ হয়ে যায়?
Table of Contents
Toggleএই লেখায় আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করব-
অনেকের ধারণা, চেক ডিজওনার মামলায়, একবার জেল খেটে ফেললেই দায়মুক্তি মেলে। কিন্তু আইন কী বলছে? পাওনাদারের টাকা আদায়ের উপায় কি তাহলে আর কিছুই থাকলো না? চলুন, আইনি প্রেক্ষাপটে বিষয়টি সহজভাবে বোঝার চেষ্টা করি।
সাধারণ ধারণা বনাম আইনি বাস্তবতা:
জেল খাটা কি টাকা পরিশোধের বিকল্প? এই প্রশ্নটি অধিকাংশ মানুষের মনেই ঘুরপাক খায়।একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হলো, চেক ডিজওনার মামলায় আসামীকে যে কারাদণ্ড দেওয়া হয় (যা অনেক সময় জরিমানার অনাদায়ে ভোগ করতে হয়), সেটি ভোগ করলেই টাকার দায় থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অর্থাৎ, জেল খাটলেই আর টাকা দিতে হবে না। কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। আইনের চোখে, চেক ডিজওনার মামলায় আদালত যে জরিমানা করেন (যা সাধারণত চেকে উল্লেখিত টাকার অংক বা তার দ্বিগুণ পর্যন্ত হতে পারে), সেটা এক প্রকার আর্থিক দণ্ড। এই আর্থিক দণ্ড বা জরিমানা পরিশোধ করা আসামীর জন্য বাধ্যতামূলক। যদি আসামী জরিমানার টাকা পরিশোধ না করে, তবেই আদালত বিকল্প হিসেবে কারাদণ্ড দেন।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, এই বিকল্প কারাদণ্ড ভোগ করা মানে এই নয় যে জরিমানার টাকা মওকুফ হয়ে গেল। আসামী যখন জরিমানার পরিবর্তে জেল খাটে, তখন সে কেবল জরিমানা পরিশোধ না করার পরিণতির অংশ হিসেবে শারীরিক দণ্ড ভোগ করে। কিন্তু জরিমানার টাকা পরিশোধ করার যে বাধ্যবাধকতা, সেটা থেকেই যায়।
এক কথায়, জেল খাটাটা জরিমানার বিকল্প পরিশোধ নয়, বরং জরিমানা পরিশোধ না করার শাস্তি। তাই, জেল খেটেও আসামীর জরিমানার টাকা পরিশোধ করতেই হবে। এর থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই, যদি না পাওনাদার নিজে থেকে টাকা আদায়ের প্রক্রিয়া থেকে সরে আসেন।
যদি আসামী টাকা পরিশোধ না করে জেদ ধরে বসে থাকে, তাহলে তার জন্য ফলাফল হতে পারে আরও ভয়াবহ – সারাজীবন জেলেই থাকতে হতে পারে, যদি তার সম্পত্তি থেকে টাকা আদায় করা সম্ভব না হয়।
জেল খাটার পরেও টাকা আদায়ের আইনি প্রক্রিয়া– ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৮৬ ধারা
এখন প্রশ্ন হলো, আসামী জেল খেটে ফেলার পর পাওনাদার কীভাবে তার টাকা (আদালত কর্তৃক ধার্যকৃত জরিমানার টাকা) আদায় করবেন? এখানেই ফৌজদারী কার্যবিধির একটি বিশেষ ধারা পাওনাদারকে সাহায্য করবে। যে আদালত আসামিকে চেক ডিজওনার মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে জেল ও জরিমানা (বা শুধু জরিমানা) দিয়েছেন, সেই আদালতেই পাওনাদার বা বাদীপক্ষ একটি আবেদন করতে পারেন। এই আবেদনটি করা হয় ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ (Code of Criminal Procedure, 1898) এর ৩৮৬ ধারার বিধান অনুযায়ী।
ধারা ৩৮৬ এর উপধারা (১)(বি) অনুযায়ী, পাওনাদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত আসামীর (যাকে এখানে ‘দায়িক’ বা যিনি টাকা দিতে বাধ্য) কাছ থেকে জরিমানার টাকা আদায় করার জন্য একটি ‘লেভী ওয়ারেন্ট‘ (Levy Warrant) ইস্যু করবেন। এই লেভী ওয়ারেন্টে সাধারণত আসামীর যে সম্পত্তি থেকে টাকা আদায় করা যেতে পারে, সেটির বিবরণ থাকে।
আদালত এই লেভী ওয়ারেন্টটি কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রেরণ করেন। আমাদের দেশে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হলেন জেলা প্রশাসক বা ডিসি সাহেব।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ভূমিকা: সরকারী দাবী আদায় আইন, ১৯১৩
জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যখন আদালতের ইস্যু করা লেভী ওয়ারেন্ট পৌঁছায়, তখন এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেয়। ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৮৬ ধারার বিধান অনুযায়ী, ফৌজদারী আদালত কর্তৃক আরোপিত জরিমানার টাকা আদায়ের জন্য ইস্যুকৃত লেভী ওয়ারেন্টকে দেওয়ানী আদালতের একটি ‘ডিক্রী’ (Decree) হিসাবে গণ্য করা হয়। দেওয়ানী আদালতের ডিক্রী মানে হলো একটি আনুষ্ঠানিক আদেশ যা পক্ষগুলোর অধিকার ও বাধ্যবাধকতা নির্দিষ্ট করে এবং এটি কার্যকর করার আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরী হয়। যেহেতু এই টাকা এখন আদালতের আদেশের মাধ্যমে আদায়যোগ্য, তাই এটি এক প্রকার ‘সরকারী দাবী’ (Government Demand) হিসাবে বিবেচিত হয়। আর এই সরকারী দাবী আদায়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট আইন রয়েছে – ‘সরকারী দাবী আদায় আইন, ১৯১৩‘ (Public Demands Recovery Act, 1913)।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এই লেভী ওয়ারেন্ট প্রাপ্তির পর সরকারী দাবী আদায় আইন, ১৯১৩ এর বিধান অনুসরণ করে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এই আইনের অধীনে টাকা আদায়ের জন্য একজন ‘সার্টিফিকেট অফিসার’ দায়িত্ব পালন করেন।
সরকারী দাবী আদায় আইনের ১৪ ধারায় টাকা আদায়ের কয়েকটি পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। সার্টিফিকেট অফিসার এই ধারা অনুযায়ী নিচের এক বা একাধিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন:
১. সম্পত্তি ক্রোক ও বিক্রয়: দায়িকের (আসামীর) স্থাবর সম্পত্তি (যেমন জমি, বাড়ি) অথবা অস্থাবর সম্পত্তি (যেমন গাড়ি, ব্যাংক হিসাব, আসবাবপত্র ইত্যাদি) ক্রোক বা আটক করে বিক্রয় করে সেই টাকা থেকে সরকারী দাবী (জরিমানার টাকা) আদায় করা। সম্পত্তি ক্রোক ছাড়াও বিক্রয় করা যেতে পারে, যদি আইনত এর সুযোগ থাকে।
২. ডিক্রী ক্রোক: দায়িক যদি অন্য কারো কাছ থেকে কোনো টাকা বা সম্পত্তি পাওয়ার জন্য কোনো আদালতের ডিক্রী পেয়ে থাকেন, তবে সেই ডিক্রীটিও ক্রোক করে টাকা আদায় করা যেতে পারে।
৩. দেনাদারকে গ্রেফতার: সরকারী দাবী আদায় আইনের অধীনে দায়িক বা দেনাদারকে গ্রেফতার করে দেওয়ানী কয়েদে আটক রাখা যেতে পারে, যদি তার কোনো সম্পত্তি না পাওয়া যায়।
সার্টিফিকেট অফিসার এই পদ্ধতিগুলোর যেকোনো একটি বা সবগুলো প্রয়োগ করে জরিমানার টাকা আদায়ের উদ্যোগ নিবেন।
সম্পত্তি হস্তান্তর সংক্রান্ত জটিলতা ও আইনি সমাধান
টাকা আদায়ের প্রক্রিয়ায় অনেক সময় একটি জটিলতা দেখা দেয়। আসামীরা পাওনাদারকে ঠকানোর উদ্দেশ্যে বা শাস্তি এড়ানোর জন্য তাদের সম্পত্তি অন্যদের কাছে বিক্রি বা হস্তান্তর করে দিতে পারে। এই ক্ষেত্রে কী হবে?
আইন এখানে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়:
* মামলা দায়েরের আগে সম্পত্তি বিক্রি: যদি আসামী চেক ডিজওনার মামলা দায়ের হওয়ার আগেই তার কোনো সম্পত্তি বিক্রি করে দেন, তবে সেই ক্রেতার স্বার্থ সাধারণত সুরক্ষিত থাকে। কারণ, মামলা হওয়ার আগে যিনি আইনত সম্পত্তি কিনে নিয়েছেন, তার অধিকার এখানে অগ্রগণ্য হবে এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সেই সম্পত্তি ক্রোক বা বিক্রয়ের উদ্যোগ নাও নিতে পারেন।
* মামলা চলাকালীন সম্পত্তি বিক্রি: কিন্তু যদি আসামী চেক ডিজওনার মামলা চলাকালীন সময়ে পাওনাদারকে বঞ্চিত করার অসৎ উদ্দেশ্যে তার সম্পত্তি অন্য কারো কাছে বিক্রি বা বন্ধক রাখেন, তবে সেই ক্ষেত্রে আইন ভিন্ন কথা বলে। ধরে নেওয়া হয় যে, আসামী যেহেতু জানতেন তার বিরুদ্ধে একটি আইনি প্রক্রিয়া চলছে এবং তাকে টাকা পরিশোধ করতে হতে পারে, তাই এই হস্তান্তরটি টাকা আদায়কে বাধাগ্রস্ত করার কৌশল হিসেবে করা হয়েছে। এমন ক্ষেত্রে, লেভী ওয়ারেন্টের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে না। অর্থাৎ, মামলা চলাকালীন সময়ে হস্তান্তর করা সম্পত্তিও ক্রোক ও বিক্রয় করে টাকা আদায় করা যাবে, (provided the transfer was not bona fide or with knowledge of the claim).
এখানে মূল নীতি হলো, আইন চায় না যে কোনো ব্যক্তি আদালতের আদেশ বা পাওনাদারের ন্যায্য দাবী এড়ানোর জন্য বেআইনি বা অসৎ উপায় অবলম্বন করুক।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা: একটি কেস স্টাডি
ফৌজদারী আদালত কর্তৃক আরোপিত জরিমানা যে দেওয়ানী ডিক্রীর মতো কার্যকরযোগ্য এবং আসামী জেল খেলেও যে জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য, এই বিষয়টি উচ্চ আদালতের একটি রায়ে খুব স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। যদিও রায়টি একটি দুর্নীতির মামলার জরিমানা আদায় সংক্রান্ত, তবে সেখানে বর্ণিত আইনি নীতিটি চেক ডিজওনার মামলার জরিমানা আদায়ের ক্ষেত্রেও সরাসরি প্রযোজ্য।
আসুন সেই কেস স্টাডিটি দেখি:
মামলার নাম: মোঃ রওশন আলী বনাম রাষ্ট্র
রেফারেন্স: ২০০২ বি.এল.ডি. পৃষ্ঠা ৩৩
মামলার প্রেক্ষাপট: এই মামলাটি ছিল পাবনা জেলার বেড়া উপজেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান কর্তৃক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাৎ সংক্রান্ত। বেড়া পৌরসভার কমিশনার রওশন আলী ত্রাণ হিসেবে ২০ মেট্রিক টন চাল গ্রহণ করেছিলেন বিতরণের জন্য, কিন্তু তিনি তা বিতরণ না করে ১,৯৬,৮০০/- টাকা মূল্যের চাল আত্মসাৎ করেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনে মামলা হয়।
আদালতের রায়: বিচারিক আদালত রওশন আলীকে দোষী সাব্যস্ত করে ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং আত্মসাৎকৃত চালের মূল্যের সমপরিমাণ, অর্থাৎ ১,৯৬,৮০০/- টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। রওশন আলী এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করেন।
হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত ও পর্যবেক্ষণ: হাইকোর্ট বিভাগ আপিল খারিজ করে দেন এবং বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো হাইকোর্টের একটি নির্দেশনা। হাইকোর্ট নির্দেশ দেন যে, বিভাগীয় বিশেষ বিচারক যেন রওশন আলীর কাছ থেকে জরিমানার ১,৯৬,৮০০/- টাকা আদায় করার ব্যবস্থা করেন।
রায়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়
* ফৌজদারী আদালত কর্তৃক আসামীর উপর আরোপিত জরিমানা হলো একটি ‘আর্থিক দণ্ড’। এটি শারীরিক দণ্ডের বিকল্প নয় যা জেল খেটে মওকুফ হয়ে যায়।
* আসামী জরিমানা পরিশোধ না করে তদস্থলে কারাদণ্ড ভোগ করা বেছে নিতে পারে না। যদি তাকে এই সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে জরিমানার উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে।
* ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৮৬ ধারার বিধানানুসারে জরিমানা দেওয়ানি আদালতের ডিক্রির মতো একটি অবশ্য পরিশোধ্য আদেশ।
* জরিমানা হলো সরকারের পাওনা এবং এটি ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৮৬ ধারার পদ্ধতি অনুসরণ করে আদায় করতে হবে।
* দুর্নীতির মামলায় তছরুফকৃত মালামালের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা করার উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্রীয় ক্ষতির ক্ষতিপূরণ করা। যদি এই ক্ষতিপূরণ আদায় না করা হয়, তবে অপরাধীরা এমন কাজ করতে উৎসাহিত হবে।
* এরূপ জরিমানা দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির সম্পদের উপর একটি দায় সৃষ্টি করে এবং তা তার মৃত্যুর পরও আদায়যোগ্য।
* শুধুমাত্র যেক্ষেত্রে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির সম্পত্তি থেকে জরিমানার অর্থ আদায় করা যায় না, কেবল সেই ক্ষেত্রেই দণ্ডিত ব্যক্তিকে জরিমানার পরিবর্তে কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। অন্যথায় নয়।
চেক ডিজওনার মামলায় এই রায়ের তাৎপর্য:
মোঃ রওশন আলী বনাম রাষ্ট্র মামলার এই রায়টি চেক ডিজওনার মামলার পাওনাদারদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি নিশ্চিত করে যে, ফৌজদারী আদালত যদি চেক ডিজওনার মামলায় আসামীকে জরিমানার আদেশ দেন (যা প্রায়শই চেকে উল্লেখিত অর্থের সমপরিমাণ বা দ্বিগুণ হয়) এবং আসামী সেই জরিমানা পরিশোধ না করে জেলে যায়, তবুও পাওনাদার ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৮৬ ধারা ব্যবহার করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে সেই জরিমানার টাকা আদায় করতে পারেন। এই জরিমানার টাকা আদায় হলে সেটি পাওনাদারকেই ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হয়।
এই রায় প্রমাণ করে যে, জেল খাটা মানেই সব শেষ নয়। আইন পাওনাদারকে তার ন্যায্য পাওনা আদায়ের পথ দেখিয়েছে, भलेই আসামী জেল খেটেছে।
এই সম্পর্কে আরে বিস্তারিত জানতে আমাদের চেক ডিজঅনার মামলা: একটি বিস্তারিত আলোচনা (এ টু জেড)
ব্লগ টি তে ক্লিক করুন
কেন এই আইনি প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ?
চেক ডিজওনার মামলায় অনেক সময় পাওনাদার আর্থিক ক্ষতির শিকার হন। আইনি প্রক্রিয়ায় গিয়ে আসামীকে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্য শুধু অপরাধীকে দণ্ড দেওয়া নয়, বরং পাওনাদারের ক্ষতিপূরণ আদায় করাও এর একটি লক্ষ্য। যদি আসামী শুধু জেল খেটেই দায়মুক্তি পেয়ে যায়, তাহলে পাওনাদার তার টাকা থেকে বঞ্চিতই থেকে যাবে, যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৮৬ ধারা এবং সরকারী দাবী আদায় আইন, ১৯১৩ এর বিধানগুলো নিশ্চিত করে যে, আদালতের আদেশ অর্থাৎ জরিমানার টাকা অবশ্যই আদায়যোগ্য। এটি একদিকে যেমন অপরাধীকে আর্থিক দায়বদ্ধতার মুখোমুখি করে, তেমনি অন্যদিকে পাওনাদারকে তার হারানো টাকা ফিরে পাওয়ার সুযোগ করে দেয়।
কিছু সীমাবদ্ধতা ও করণীয়:
যদিও এই আইনি প্রক্রিয়া টাকা আদায়ের একটি শক্তিশালী উপায়, তবে এর কার্যকারিতা নির্ভর করে আসামীর সম্পত্তির উপর। যদি আসামীর দৃশ্যত কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি না থাকে, তবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা সার্টিফিকেট অফিসারের পক্ষে টাকা আদায় করা কঠিন হতে পারে। সেক্ষেত্রে সরকারী দাবী আদায় আইনের ১৪ ধারার বিধান অনুযায়ী দেনাদারকে দেওয়ানী কয়েদে আটক রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যা টাকা আদায়ের জন্য এক প্রকার চাপ সৃষ্টি করে।
একজন পাওনাদার হিসাবে, যদি আসামী জেল খেটে ফেলার পরেও আপনি আপনার টাকা (আদালত কর্তৃক ধার্যকৃত জরিমানা বাবদ) আদায় করতে চান, তবে দ্রুত আপনার আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে সংশ্লিষ্ট ফৌজদারী আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৮৬ ধারা অনুযায়ী আবেদন করুন। আপনার আইনজীবীর পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
পরিশেষে:
চেক ডিজওনার মামলায় জেল খাটা মানেই সব শেষ নয়। আসামী জেল খেলেও আদালত কর্তৃক আরোপিত জরিমানার টাকা অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। এই টাকা আদায়ের জন্য ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৮৬ ধারা এবং সরকারী দাবী আদায় আইন, ১৯১৩ অনুযায়ী জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তও এই আইনি অবস্থানকে জোরালোভাবে সমর্থন করে। তাই, পাওনাদারদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জেল খাটার পরেও আসামীর কাছ থেকে আপনার পাওনা টাকা আদায় করা সম্ভব।
গুরুত্বপূর্ণ disclaimer: এই লেখাটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য। তবে আপনার নির্দিষ্ট পরিস্থিতির জন্য সঠিক আইনি পরামর্শ পেতে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন।