Edit Template

দেওয়ানী আর ফৌজদারি মামলা এক জিনিস নয় – জানুন কোন পরিস্থিতিতে কোনটি প্রযোজ্য

দেওয়ানী আর ফৌজদারি মামলা

মোবারক হোসেন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, তাঁর পৈতৃক জমিতে হঠাৎ করে পাশের গ্রামের লোকজন বেড়া দিয়ে রেখেছে। তিনি থানায় গেলেন, কিন্তু পুলিশ বলল, “এটা দেওয়ানী বিষয়, আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারব না।”

অন্যদিকে, শেলী বেগমের স্বামী তাকে মারধর করেছে—তিনি থানায় গেলে সঙ্গে সঙ্গে জিডি ও মেডিকেল করিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হলো।

এই দুইটা ঘটনাই আইনগত সমস্যা, কিন্তু প্রতিক্রিয়া একেবারেই আলাদা কেন? এর উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের বুঝতে হবে দেওয়ানী ও ফৌজদারি আইনের মধ্যে মূল পার্থক্য কোথায়? আইন সাধারণ মানুষের জন্য, কিন্তু অনেক সময় এর জটিলতা দেখে আমরা ঘাবড়ে যাই। অথচ কিছু মৌলিক বিষয় জানলেই আমরা আমাদের অধিকার রক্ষায় সঠিক পথে এগোতে পারি। দেওয়ানী এবং ফৌজদারি মামলা সেই মৌলিক বিষয়গুলোরই অংশ। চলুন, সহজ ভাষায় জেনে নিই কখন আপনার দেওয়ানী প্রতিকার প্রয়োজন, আর কখন আইনের দৃষ্টিতে সেটা ফৌজদারি অপরাধ।

দেওয়ানী মামলা মানে কী?

সহজ কথায়, দেওয়ানী মামলা হলো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার অধিকার বা সম্পত্তির বিরোধ সংক্রান্ত বিষয়। এখানে কোনো অপরাধ ঘটে না, বরং কারো অধিকার ক্ষুণ্ন হয় বা চুক্তির বরখেলাপ হয়। যেমন, আপনি আপনার বন্ধুকে কিছু টাকা ধার দিলেন, কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে সে টাকা ফেরত দিচ্ছে না। এটা একটা দেওয়ানী বিরোধ। আপনার টাকা ফেরত পাওয়ার অধিকার আছে, এবং আইন আপনাকে সেই অধিকার আদায়ে সাহায্য করবে। দেওয়ানী মামলার মূল উদ্দেশ্য হলো ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে তার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দেওয়া, অথবা বিরোধের একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান করা। এখানে কাউকে শাস্তি দেওয়া মূল লক্ষ্য নয়।

দেওয়ানী মামলার কিছু সাধারণ উদাহরণ হলো:

জমি বা সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ: কে জমির মালিক, সীমানা সংক্রান্ত সমস্যা, জোরপূর্বক দখল (তবে নতুন আইন আসার পর এতে পরিবর্তন এসেছে, যা আমরা পরে আলোচনা করব)।

উত্তরাধিকার সংক্রান্ত মামলা: পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ভাইবোন বা আত্মীয়দের মধ্যে বিরোধ।

চুক্তি ভঙ্গ: কারো সাথে কোনো চুক্তি করলেন (যেমন বাড়ি ভাড়া বা ব্যবসার চুক্তি), কিন্তু অন্য পক্ষ তা মানছে না।

 পারিবারিক বিষয়: বিবাহবিচ্ছেদ (তালাক), খোরপোষ (স্ত্রীর ভরণপোষণ), সন্তানের guardianship বা হেফাজত কে পাবে—এসবই দেওয়ানী মামলার আওতাভুক্ত।

দেনাপাওনা বা অর্থ আদায়: পাওনা টাকা আদায়, ব্যাংকের ঋণ সংক্রান্ত মামলা।

মানহানির মামলা: কেউ যদি আপনার সম্মানহানি করে মিথ্যা তথ্য ছড়ায়, আপনি তার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে দেওয়ানী মামলা করতে পারেন।

দেওয়ানী মামলাগুলো সাধারণত সিভিল প্রসিডিউর কোড, ১৯০৮ (Civil Procedure Code, CPC) অনুযায়ী পরিচালিত হয়। আদালত এখানে সাক্ষী, দলিলপত্র ইত্যাদি যাচাই করে নির্ধারণ করেন কে সঠিক এবং কার দাবি আইনসম্মত। এরপর আদালত আদেশ দেন, যা পালন করা সবার জন্য বাধ্যতামূলক। যেমন, আদালত রায় দিতে পারেন যে জমিটি আপনার, অথবা অন্য পক্ষকে আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

ফৌজদারি মামলা কোনগুলো?

অন্যদিকে, ফৌজদারি মামলা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। এখানে ব্যক্তিগত অধিকারের চেয়ে সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যখন কেউ এমন কোনো কাজ করে যা রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়েছে—যেমন চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ, মারামারি, প্রতারণা—তখন সেটা ফৌজদারি অপরাধ। ফৌজদারি মামলার উদ্দেশ্য হলো অপরাধীকে চিহ্নিত করা এবং তাকে শাস্তি দেওয়া, যাতে সমাজে অপরাধ প্রবণতা কমে এবং মানুষ নিরাপদ বোধ করে। এখানে রাষ্ট্র বা সরকার নিজেই বাদী হয়ে থাকে, কারণ অপরাধকে কেবল ব্যক্তিগত বিষয় নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হয়। যদিও অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি এজাহার (FIR) দায়ের করেন বা আদালতে সরাসরি অভিযোগ করেন, কিন্তু মূল মামলাটি চলে রাষ্ট্র বনাম অভিযুক্ত ব্যক্তির মধ্যে।

ফৌজদারি মামলার কিছু বহুল প্রচলিত উদাহরণ হলো:

শারীরিক আঘাত বা সহিংসতা: কাউকে মারধর করা, গুরুতর জখম করা, হত্যা চেষ্টা বা হত্যাকাণ্ড।

সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধ: চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, দস্যুতা, চাঁদাবাজি।

যৌন অপরাধ: ধর্ষণ, যৌন হয়রানি।

প্রতারণা জালিয়াতি: মিথ্যা কথা বা দলিল দেখিয়ে কাউকে ঠকানো।

মাদক দ্রব্য সংক্রান্ত অপরাধ: মাদক বেচাকেনা বা সেবন।

নারী শিশু নির্যাতন: যৌতুকের জন্য মারধর, এসিড নিক্ষেপ, শিশু অপহরণ।

ভূমি জবরদখল: (নতুন আইন অনুযায়ী এটি এখন স্পষ্টতই ফৌজদারি অপরাধ)।

ফৌজদারি মামলাগুলো পরিচালিত হয় দণ্ডবিধি, ১৮৬০ (Penal Code) এবং ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ (Code of Criminal Procedure, CrPC) এবং কিছু স্পেশাল আইন অনুযায়ী। দণ্ডবিধি বিভিন্ন অপরাধের সংজ্ঞা দেয় এবং সেগুলোর শাস্তি নির্ধারণ করে। ফৌজদারি কার্যবিধি বলে দেয় কীভাবে তদন্ত হবে, কীভাবে আদালতে বিচার হবে, এবং কীভাবে শাস্তি কার্যকর করা হবে। ফৌজদারি মামলায় প্রমাণ হতে হয় ‘reasonable doubt’ বা যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের ঊর্ধ্বে। অর্থাৎ, আদালতকে প্রায় নিশ্চিত হতে হয় যে অভিযুক্ত ব্যক্তিই অপরাধ করেছেন, তবেই তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। শাস্তি হতে পারে জরিমানা, কারাদণ্ড, বা ক্ষেত্রবিশেষে মৃত্যুদণ্ড।

একই ঘটনায় দুই মামলা হয় কি? হলে কিভাবে?

আইনের এই দুই ধরনের প্রকৃতি বোঝার পর মনে প্রশ্ন আসতে পারে, একই ঘটনা থেকে কি দেওয়ানী এবং ফৌজদারি দুই ধরনের মামলাই হতে পারে? উত্তর হলো—হ্যাঁ, হতে পারে। মোবারক হোসেনের উদাহরণটিই আবার দেখি। জমি দখল করা মূলত সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ, যা দেওয়ানী বিষয়। তিনি আদালতে দেওয়ানী মামলা করে জমির দখল এবং মালিকানা ফিরে পেতে পারেন। কিন্তু যদি যারা জমি দখল করেছে তারা মোবারক হোসেনকে জমিতে ঢুকতে বাধা দেয়, ভয় দেখায়, বা বলপ্রয়োগ করে তাকে শারীরিক আঘাত করে, তাহলে দখল করার দেওয়ানী বিষয়ের সাথে সাথে ভয় দেখানো, মারধর করা ইত্যাদি ফৌজদারি অপরাধও সংঘটিত হলো।

এক্ষেত্রে মোবারক হোসেন দেওয়ানী আদালতে জমির মালিকানা বা দখল ফিরে পাওয়ার জন্য মামলা করতে পারেন, এবং একই সাথে বা আলাদাভাবে থানায় মারধর বা ভয় দেখানোর জন্য ফৌজদারি মামলাও করতে পারেন। ফৌজদারি মামলায় অপরাধীদের শাস্তি হতে পারে, আর দেওয়ানী মামলায় তিনি তার হারানো অধিকার বা সম্পত্তির দখল ফিরে পেতে পারেন।

আরেকটি উদাহরণ হতে পারে চেক ডিজঅনার। আপনি কাউকে চেক দিলেন কিন্তু অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় চেকটি প্রত্যাখ্যাত হলো। পাওনাদার তার টাকা আদায়ের জন্য আপনার বিরুদ্ধে দেওয়ানী মামলা করতে পারেন। কিন্তু চেক ডিজঅনার বর্তমানে একটি ফৌজদারি অপরাধও বটে (নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী)। ফলে আপনার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও হতে পারে এবং তাতে আপনার জেল বা জরিমানা হতে পারে। এখানে দেওয়ানী মামলা টাকার জন্য, আর ফৌজদারি মামলাটা অপরাধ হিসেবে চেক ডিজঅনার করার জন্য।

নতুন ভূমি আইন ও এর তাৎপর্য

ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ আমাদের দেশে একটি বড় সমস্যা। আগে অনেক ক্ষেত্রেই জমি দখল বা জাল দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার মতো বিষয়গুলো প্রধানত দেওয়ানী মামলা হিসেবে দেখা হতো, যার নিষ্পত্তি হতে বছরের পর বছর লেগে যেত। দখলদার হয়তো দিব্যি বহাল তবিয়তে থাকত। এই দীর্ঘসূত্রিতা কমাতে এবং ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ দমনে সরকার নতুন আইন প্রণয়ন করেছে।

ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ প্রতিকার আইন, ২০২৩এই ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই আইন অনুযায়ী, এখন থেকে অনেকগুলো ভূমি সম্পর্কিত কাজকে সুনির্দিষ্টভাবে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

জোরপূর্বক বা অবৈধভাবে ভূমি দখল করা: এটি এখন একটি গুরুতর অপরাধ।

প্রতারণামূলক দলিল তৈরি বা ব্যবহার করা: জাল কাগজপত্র বানিয়ে জমি বা সম্পত্তি নিজের নামে করে নেওয়া।

অন্যের জমি নিজের দখলে রাখার উদ্দেশ্যে সীমানা পরিবর্তন বা খুঁটি উপড়ে ফেলা: সম্পত্তির মালিকানায় সমস্যা তৈরির উদ্দেশ্যে এমন কাজ করা।

সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন খাস বা অর্পিত সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলে রাখা বা হস্তান্তর করা: এগুলোও এখন শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এই আইনের ফলে এখন মোবারক হোসেনের মতো কেউ যদি দেখেন তার জমি জোর করে দখল করা হয়েছে, তিনি দেওয়ানী আদালতের পাশাপাশি সরাসরি থানায় গিয়ে ফৌজদারি মামলাও করতে পারেন। পুলিশ তদন্ত করবে এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে দখলদারদের শাস্তি হতে পারে। এটি ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ দমনে রাষ্ট্রকে আরও শক্তিশালী ভূমিকা পালনের সুযোগ করে দিয়েছে।

সম্প্রতি প্রকাশিতভূমি বিধিমালা, ২০২৪ এই আইনের বিস্তারিত প্রয়োগ পদ্ধতি, কোন কর্তৃপক্ষ কীভাবে ব্যবস্থা নেবে—এসব বিষয় স্পষ্ট করেছে। এর ফলে ভূমি সংক্রান্ত অপরাধের প্রতিকার দ্রুত ও কার্যকরভাবে পাওয়া সহজ হবে বলে আশা করা যায়।

দেওয়ানী ফৌজদারির মূল পার্থক্য আলোচনা

.  বিষয়বস্তু: দেওয়ানী মামলা মূলত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যেকার অধিকার, সম্পত্তি বা চুক্তির বিরোধ নিয়ে কাজ করে। পক্ষান্তরে, ফৌজদারি মামলা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ নিয়ে কাজ করে, যা সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে।

.  পক্ষসমূহ: দেওয়ানী মামলায় বাদী এবং বিবাদী উভয়েই সাধারণত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হয় (যেমন মোবারক বনাম দখলদার)। ফৌজদারি মামলায় বাদী হলো রাষ্ট্র বা সরকার (প্রসিকিউশন), এবং বিবাদী হলো অভিযুক্ত ব্যক্তি (যেমন রাষ্ট্র বনাম অভিযুক্ত ব্যক্তি)।

.  উদ্দেশ্য: দেওয়ানী মামলার প্রধান উদ্দেশ্য হলো ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে তার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, ক্ষতিপূরণ আদায় করা, বা বিরোধের সমাধান করা। ফৌজদারি মামলার মূল উদ্দেশ্য হলো অপরাধীকে তার অপরাধের জন্য শাস্তি দেওয়া (যেমন জেল, জরিমানা)।

.  প্রমাণ: দেওয়ানী মামলায় প্রমাণ ‘balance of probabilities’ বা সম্ভাবনার ভারসাম্যের ভিত্তিতে হয়, অর্থাৎ আদালতকে দেখতে হয় কোন পক্ষের দাবি বেশি যুক্তিসঙ্গত বা সম্ভাব্য। ফৌজদারি মামলায় প্রমাণ হতে হয় ‘beyond a reasonable doubt’ বা যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের ঊর্ধ্বে, অর্থাৎ আদালতকে প্রায় শতভাগ নিশ্চিত হতে হয় যে অভিযুক্ত ব্যক্তিই অপরাধ করেছেন।

.  ফলাফল: দেওয়ানী মামলায় আদালত আদেশ দিতে পারেন যেমন ক্ষতিপূরণ দেওয়া, সম্পত্তি ফেরত দেওয়া, চুক্তি পালন করা বা না করার নির্দেশ দেওয়া। ফৌজদারি মামলায় ফলাফল হলো শাস্তি—যেমন জরিমানা, কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড।

.  মামলা দায়ের: দেওয়ানী মামলা ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ নিজেই আদালতে সরাসরি বা আইনজীবীর মাধ্যমে দায়ের করেন। ফৌজদারি মামলা সাধারণত পুলিশ এজাহার রেকর্ড করার মাধ্যমে শুরু হয়, অথবা ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সরাসরি আদালতেও মামলা (সিআর মামলা) করতে পারেন। তবে বিচারের সময় রাষ্ট্রই বাদী হয়ে মামলা পরিচালনা করে।

এই মৌলিক পার্থক্যগুলোই নির্ধারণ করে দেয় আপনার সমস্যাটি সমাধানের জন্য আপনাকে দেওয়ানী আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে নাকি ফৌজদারি আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে, নাকি ক্ষেত্রবিশেষে উভয় পথেই হাঁটতে হবে।

আপনি কীভাবে বুঝবেন কোনটা আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?

এটা বোঝার সহজ উপায় হলো আপনার সমস্যার প্রকৃতিটা বিশ্লেষণ করা। যদি আপনার কোনো অধিকার ক্ষুণ্ন হয় (যেমন সম্পত্তির মালিকানা, টাকা পাওনা, চুক্তির শর্ত পূরণ না হওয়া, উত্তরাধিকারের ভাগ না পাওয়া, পারিবারিক অধিকার)—এবং এর মাধ্যমে সমাজের জন্য বড় কোনো হুমকির সৃষ্টি না হয়, তবে সম্ভবত এটি একটি দেওয়ানী বিষয়। আপনার লক্ষ্য হবে হারানো অধিকার বা পাওনা ফিরে পাওয়া।

যদি কেউ আপনার বা অন্য কারো বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক কাজ করে (যেমন মারধর, চুরি, প্রতারণা, জবরদখল, ভয় দেখানো) যা প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য—তবে এটি একটি ফৌজদারি বিষয়। এক্ষেত্রে অপরাধীর শাস্তিবিধান হওয়া জরুরি।

মনে রাখবেন, কিছু কিছু ঘটনা, যেমন আগে আলোচনা করা হয়েছে, একইসাথে দেওয়ানী ও ফৌজদারি প্রকৃতির হতে পারে। জোরপূর্বক জমি দখল এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এক্ষেত্রে আপনার আইনজীবী আপনাকে পরামর্শ দেবেন কীভাবে দেওয়ানী মামলা করে সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করা যায় এবং ফৌজদারি মামলা করে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা যায়। তাই জটিল পরিস্থিতিতে বা যখন আপনি নিশ্চিত নন, একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া অত্যাবশ্যক।

উপসংহার

আইন হচ্ছে সমাজের দর্পণ, আর দেওয়ানী ও ফৌজদারি আইন হলো এর দুটি প্রধান শাখা। এই দুই ধরনের মামলার পার্থক্য বোঝা একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আপনার জন্য অত্যন্ত জরুরি। মোবারক হোসেন বা শেলী বেগমের মতো পরিস্থিতিতে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হলে আপনাকে জানতে হবে কখন থানা পুলিশ আপনার পাশে দাঁড়াবে (ফৌজদারি বিষয় হলে), আর কখন আপনাকে আদালতের দেওয়ানী বিভাগের শরণাপন্ন হতে হবে (অধিকার বা সম্পত্তির বিরোধ হলে)। নতুন ভূমি আইনের মতো পরিবর্তনগুলো এই পার্থক্যটিকে আরও স্পষ্ট করেছে এবং ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ দমনে নাগরিকদের নতুন পথ দেখিয়েছে। আইন জানা থাকলে আপনি অন্যায়ের প্রতিকার চাইতে ভয় পাবেন না এবং সঠিক পথে এগিয়ে যেতে পারবেন।

আপনার অধিকার ও নিরাপত্তা সুরক্ষায় আইন সবসময় আপনার পাশে আছে, শুধু প্রয়োজন আইন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা রাখা এবং প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নেওয়া। মনে রাখবেন, আইনের জ্ঞানই আপনার সুরক্ষা।

আপনার মতামত দিন
Social Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Impact Financial

Good draw knew bred ham busy his hour. Ask agreed answer rather joy nature admire wisdom.

Latest Posts

  • All Posts
  • আইনগত পরামর্শ
  • আদালত সংক্রান্ত সেবা
  • আন্তর্জাতিক আইন
  • ই-বুক
  • কেস লিস্ট এস সি
  • গ্যালারি
  • গ্যালারি_১
  • জন সচেতনতা
  • ব্লগ
    •   Back
    • ফৌজদারি আইন
    • দেওয়ানী
    • ইনকাম টেক্স
    • ভোক্তা অধিকার
    • পারিবারিক

Categories

Tags

আমাদের সকল আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

You have been successfully Subscribed! Ops! Something went wrong, please try again.

আইন, অধিকার ও আইনী পরামর্শ।

আমাদের সম্পর্কে

কপিরাইট নোটিস

ট্রেড লাইসেন্স নংঃ ২৪০০৮৮২৫০১৯০০৭৩৮৯

ডিবিআইডি: ২৮৮৬৬৬৪৬০

গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক

যোগাযোগ করুন

আমাদের ফলো করুন:

আইনকথন.কম © ২০২৫
0
    0
    Your Cart
    Your cart is emptyReturn to Home
    Scroll to Top