সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্যামিং: প্রতারণার ফাঁদ ও নিরাপত্তা কৌশল
আজকের ডিজিটাল যুগে, সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, লিংকডইনসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম আমাদের তথ্য বিনিময়, যোগাযোগ এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। তবে এর পাশাপাশি বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের অনলাইন প্রতারণা বা স্কামিং। সোশ্যাল মিডিয়ায় স্কামিং শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতির কারণ নয়, এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। একজন আইনজীবী হিসেবে, আমি এই বিষয়টি বিশদভাবে আলোচনা করব এবং স্কামিং থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় নিয়ে আলোকপাত করব।
স্কামিং কী এবং কেন এটি এত বিপদজনক?
স্কামিং বলতে বোঝায় প্রতারণার মাধ্যমে কাউকে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত করা বা ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়া। এটি মূলত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন ভুয়া প্রোফাইল, অপ্রত্যাশিত অফার, ফিশিং লিঙ্ক, বা কেলেঙ্কারির মাধ্যমে পরিচালিত হয়।সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্ক্যামারদের কার্যক্রমও বেড়ে গিয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ অনলাইন স্ক্যামের শিকার হন, যার ফলে তাদের আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও মানসিক চাপ এবং সামাজিক অসম্মানজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।
বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্কামিং এর ঘটনা বাড়ছে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য উদ্বেগজনক। এখানে কিছু উল্লেখযোগ্য উদাহরণ তুলে ধরা হলো:
১. ফিশিং: ফিশিং স্ক্যামের মাধ্যমে স্ক্যামাররা ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন পাসওয়ার্ড, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি হাতিয়ে নেয়। তারা সাধারণত ভুয়া লিঙ্ক পাঠায়, যা নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের মতো দেখতে হয়।
২. ভুয়া প্রোফাইল: অনেক স্ক্যামার ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে, যেখানে তারা নিজেকে কোনও বিখ্যাত ব্যক্তি, ব্র্যান্ড, বা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করে। এরপর তারা ব্যবহারকারীদের বিশ্বাস অর্জন করে এবং তাদের সঙ্গে প্রতারণা করে।
৩. লটারি ও পুরস্কার স্ক্যাম: “আপনি লটারি জিতেছেন” বা “আপনার জন্য একটি পুরস্কার অপেক্ষা করছে” এমন মেসেজ পেয়ে হয়তো অনেকেই আনন্দিত হন। কিন্তু এগুলো মূলত স্ক্যাম। স্ক্যামাররা এই ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে “প্রসেসিং ফি” বা “ট্যাক্স” এর অজুহাতে অর্থ আদায় করে।
৪. ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল: কিছু স্ক্যামার ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে বা তাদের ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল করে।
৫. ফেক ইনভেস্টমেন্ট অফার: অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় “দ্রুত ধনী হোন” বা “উচ্চ রিটার্নের” প্রতিশ্রুতি দেয়। স্ক্যামাররা এই ধরনের অফারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের অর্থ হাতিয়ে নেয়।
৬. ফেসবুকের মাধ্যমে পণ্য স্ক্যাম: অনেক ব্যবসায়ী ফেসবুকে পণ্য বিক্রি করার জন্য পেজ তৈরি করেন। কিন্তু কিছু স্ক্যামার ভুয়া পণ্য বিক্রির জন্য পেজ খোলে। তারা আকর্ষণীয় ছবি এবং নিম্নমূল্যের অফার দিয়ে ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করে। একবার অর্ডার দেওয়ার পর, গ্রাহকরা পণ্য পান না এবং যোগাযোগের চেষ্টা করলেও স্ক্যামাররা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে না।
৭. প্রেমের স্কাম: অনেক ব্যবহারকারী সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করেন। কিছু স্ক্যামার এই সুযোগ নিয়ে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়। তারা নিজেদেরকে বিদেশে রেখে দাবি করেন যে তারা সাহায্যের প্রয়োজন, এবং এর মাধ্যমে তারা প্রতারণা করে।
৮. চাকরি ও ইন্টার্নশিপ অফার: অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় চাকরি বা ইন্টার্নশিপের জন্য আবেদন করার সময় স্ক্যামারদের ফাঁদে পড়ে। তারা ভুয়া চাকরির অফার দেয় এবং আবেদনকারীদের কাছে “প্রসেসিং ফি” বা “রেজিস্ট্রেশন ফি” দাবি করে।
৯. ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংক স্ক্যাম: কিছু স্ক্যামার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া পোস্ট দিয়ে ব্যবহারকারীদের ব্যাংক ও ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরি করে। তারা বিভিন্ন অফার বা ডিসকাউন্টের অজুহাতে ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করে এবং তাদের তথ্য নিয়ে নেয়।
বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্কামিংয়ের ঘটনা বাড়ছে, যা ব্যক্তিগত এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি সৃষ্টি করছে। এই উদাহরণগুলো ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবহারকারীদের সচেতন করা ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
স্কামারদের আইনের আওতায় না আসার কারণ: সোশ্যাল মিডিয়ায় স্কামিং একটি গুরুতর সমস্যা, কিন্তু স্কামারদের আইনের আওতায় আনা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে পড়ে। এর পেছনে কিছু কারণ রয়েছে:
স্কামিংয়ের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত বাধা: ভিপিএন এবং অন্যান্য টুলস: স্কামিংয়ের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হচ্ছে স্কামারদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং তাদের ব্যবহৃত টুলস, যেমন ভিপিএন (ভির্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) এবং অন্যান্য প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিগুলো তাদের পরিচয় লুকাতে এবং আইনের হাত থেকে পালাতে সাহায্য করে।
১. ভিপিএন ব্যবহারের প্রভাব:
ভিপিএন ব্যবহার করে স্কামাররা তাদের আসল আইপি ঠিকানা লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়। এটি তাদের জন্য বিভিন্ন দেশে বসে স্কামিং করার সুযোগ সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ, একজন স্ক্যামার বাংলাদেশে বসবাস করলেও ভিপিএন ব্যবহার করে ইউরোপ বা আমেরিকার সার্ভার ব্যবহার করে তাদের কার্যক্রম চালাতে পারে, যা তাদের শনাক্তকরণকে জটিল করে তোলে।
২. অন্যান্য প্রযুক্তির ব্যবহার: স্কামাররা সাধারণত বিভিন্ন প্রযুক্তিগত টুলস ব্যবহার করে, যেমন:
# অ্যনোনিমাইজার: স্কামাররা তাদের পরিচয় লুকাতে অ্যনোনিমাইজার টুল ব্যবহার করে, যা তাদের অবস্থান এবং পরিচয় গোপন করে।
# ফিশিং সফটওয়্যার: তারা ফিশিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের তথ্য চুরি করতে পারে, যা তাদের কার্যক্রমকে আরও সহজ করে তোলে।
# ভুয়া অ্যাকাউন্ট: সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে তারা সহজেই ব্যবহারকারীদের বিশ্বাস অর্জন করে এবং প্রতারণা করে।
৩. প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব: অনেক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রযুক্তিগত জ্ঞানে পিছিয়ে থাকতে পারে। সাইবার ক্রাইম বা সোশ্যাল মিডিয়া স্কামিংয়ের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের অভাব থাকতে পারে, যা মামলা পরিচালনা এবং তদন্তে বাধা সৃষ্টি করে।
৪. আইনগত চ্যালেঞ্জ: বাংলাদেশে সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে আইন থাকলেও, প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অনেক সময় আইনগত ব্যবস্থা নিতে সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া পাড়ি দিতে হয়, যা অপরাধীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে।
৫. আইনের প্রয়োগে চ্যালেঞ্জ: এই প্রযুক্তিগত বাধাগুলোর কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো স্কামারদের শনাক্ত করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হিমশিম খায়। স্কামিংয়ের ঘটনার পর, প্রমাণ সংগ্রহ করা এবং অভিযুক্তদের শনাক্ত করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে, যা আইনগত প্রক্রিয়াকে জটিল করে তোলে।
৬. সচেতনতার অভাব: সাধারণ মানুষের মধ্যে স্কামিং সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে। অনেকেই স্কামিংয়ের শিকার হন কিন্তু বিষয়টি পুলিশ বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে রিপোর্ট করেন না। এটি স্কামারদের কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেতে সহায়তা করে।
আরও পড়ুনঃ আইনের চোখে আত্মরক্ষা: কোথায় সীমানা টানবেন এবং কীভাবে বৈধভাবে প্রয়োগ করবেন?
স্কামারদের শনাক্ত করার উপায়: সোশ্যাল মিডিয়ায় স্কামারদের শনাক্ত করা একটি চ্যালেঞ্জ, তবে কিছু কার্যকর পদ্ধতি রয়েছে যা সাহায্য করতে পারে। নীচে কয়েকটি উপায় উল্লেখ করা হলো:
১. ভুয়া প্রোফাইল শনাক্ত করা:
# প্রোফাইলের তথ্য: যদি প্রোফাইলের ছবি, নাম বা তথ্য অস্বাভাবিক বা অসম্পূর্ণ মনে হয়, তাহলে সেটি ভুয়া হতে পারে।
# বন্ধুদের সংখ্যা: ভুয়া প্রোফাইলগুলিতে সাধারণত বন্ধুর সংখ্যা কম থাকে এবং তারা সাধারণত নতুন অ্যাকাউন্ট হয়।
# অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ: প্রোফাইলটি যদি খুব বেশি প্রোমোশনাল বা অফার করে এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের তথ্য শেয়ার না করে, তাহলে সেটি সন্দেহজনক।
২. সন্দেহজনক লিঙ্ক:
# লিঙ্কের যাচাই: স্কামাররা প্রায়ই ফিশিং লিঙ্ক ব্যবহার করে। লিঙ্কে ক্লিক করার আগে সেটি যাচাই করুন। ইউআরএলটি যদি অস্বাভাবিক বা অজানা মনে হয়, তাহলে তা এড়িয়ে চলুন।
# শর্তাবলী ও নীতিমালা: কোনো অফার বা পুরস্কারের জন্য অনুরোধ করা হলে, তার শর্তাবলী ও নীতিমালা ভালোভাবে পড়ুন।
৩. যোগাযোগের পদ্ধতি:
# অস্বাভাবিক যোগাযোগ: যদি কেউ খুব দ্রুত বা চাপের মধ্যে আপনার কাছ থেকে তথ্য চায়, তাহলে সেটি সন্দেহজনক হতে পারে।
# ফোন কল বা মেসেজ: স্কামাররা প্রায়ই মেসেজ বা ফোন কলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। যদি এটি অপ্রত্যাশিত হয় এবং আপনি জানেন না, তাহলে এটি এড়িয়ে চলুন।
৪. অতিরিক্ত দাবি:
# অর্থের দাবি: যদি কেউ আপনার কাছ থেকে অর্থ, প্রক্রিয়াকরণ ফি বা অন্যান্য অর্থ দাবি করে, তাহলে সেটি স্কাম হতে পারে।
# ব্যক্তিগত তথ্য: স্কামাররা প্রায়ই ব্যক্তিগত তথ্য চায়, যেমন পাসওয়ার্ড বা ব্যাংক তথ্য। এসব তথ্য কখনোই শেয়ার করবেন না।
৫. অর্থ লেনদেনের সতর্কতা:
# অর্থ প্রদান করার আগে যাচাই: অনলাইন লেনদেনের ক্ষেত্রে, ব্যবসায়ীর পরিচয় যাচাই করুন এবং নিরাপদ পদ্ধতি ব্যবহার করুন।
# পেমেন্ট গেটওয়ে: বিশ্বাসযোগ্য পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করুন এবং অজানা গেটওয়ে থেকে লেনদেন এড়িয়ে চলুন।
৬. রিভিউ এবং রেটিং:
# ব্যবহারকারীদের রিভিউ: পণ্য বা পরিষেবার জন্য রিভিউ পড়ুন। যদি রিভিউগুলো অস্বাভাবিক বা বেশিরভাগই নেতিবাচক হয়, তাহলে সেটি সতর্কতা সংকেত।
# অনলাইন ফোরাম: সোশ্যাল মিডিয়ায় বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে স্কাম সম্পর্কিত আলোচনা বা সতর্কতা অনুসন্ধান করুন।
স্কামিং প্রতিরোধে করণীয়: সোশ্যাল মিডিয়ায় স্কামিং প্রতিরোধে কিছু কার্যকর কৌশল রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো:
১. ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখুন: আপনার পাসওয়ার্ড, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কখনোই অপরিচিত কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না।
২. বুদ্ধিমান ব্যবহারকারী হন: আপনার কাছে আসা মেসেজ বা লিঙ্ক ভালোভাবে যাচাই করুন। যদি কোনও অফার বা প্রস্তাব খুব বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়, তবে সেটি স্ক্যাম হতে পারে।
৩. দুই-স্তরের নিরাপত্তা (Two-factor Authentication): আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে দুই-স্তরের নিরাপত্তা চালু করুন। এটি আপনার অ্যাকাউন্টের সুরক্ষা বাড়াতে সাহায্য করবে।
৪. ভুয়া প্রোফাইল রিপোর্ট করুন: সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে ভুয়া প্রোফাইল রিপোর্ট করার অপশন থাকে। কোনও সন্দেহজনক প্রোফাইল দেখলে সেটি রিপোর্ট করুন।
৫. সাইবার অপরাধ সম্পর্কে শিক্ষিত হন: সাইবার অপরাধ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করুন এবং অন্যদেরও সচেতন করুন।
স্কামিংয়ের আইনি দিকগুলো: সোশ্যাল মিডিয়ায় স্কামিং শুধুমাত্র একটি অনৈতিক কাজ নয়, এটি আইনত অপরাধ। বাংলাদেশে এবং বিশ্বের অনেক দেশে সাইবার ক্রাইম নিয়ে কঠোর আইন রয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ অনুযায়ী স্ক্যামিং ও প্রতারণার শাস্তি
সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩-এ স্ক্যামিং, প্রতারণা, পরিচয় চুরি, বিশ্বাস ভঙ্গ, ডিজিটাল প্রতারণাসহ বিভিন্ন অনলাইন অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। নিচে সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো উল্লেখ করা হলো—
ধারা ২৩: ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক প্রতারণা: কোনো ব্যক্তি যদি ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রতারণা করেন, তবে তিনি এই ধারার অধীনে অপরাধী হবেন।
শাস্তি: সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড,সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
ধারা ২৪: পরিচয় প্রতারণা বা ছদ্মবেশ ধারণ: কোনো ব্যক্তি যদি অন্যের পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারণা করেন বা ছদ্মবেশ ধারণ করেন, তবে তিনি এই ধারার অধীনে অপরাধী হবেন। শাস্তি: সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড, সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
ধারা ৩২: হ্যাকিং : কোনো ব্যক্তি যদি বেআইনিভাবে কোনো কম্পিউটার সিস্টেম বা নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে বা প্রবেশের চেষ্টা করে, তবে তা হ্যাকিং হিসেবে গণ্য হবে।
শাস্তি: সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড, সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
ধারা ৩৫: ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যমে সম্পদ হাতিয়ে নেওয়া: কোনো ব্যক্তি যদি ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যমে অন্যের সম্পদ বা অর্থ হাতিয়ে নেন, তবে এটি ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে।
শাস্তি: সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড, সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন
ধারা ৩৬: পরিচয় চুরি ও প্রতারণা: কোনো ব্যক্তি যদি কারও ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে বা তার নাম ব্যবহার করে প্রতারণা করেন, তবে এটি অপরাধ বলে গণ্য হবে।
শাস্তি: সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড, সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
ধারা ৪০: ফিশিং (Phishing) বা প্রতারণামূলক ওয়েবসাইট ব্যবহার: কোনো ব্যক্তি যদি প্রতারণার উদ্দেশ্যে ভুয়া ওয়েবসাইট, ইমেল বা অন্য ডিজিটাল কৌশল ব্যবহার করে তথ্য হাতিয়ে নেন, তবে তিনি অপরাধী হবেন।
শাস্তি: সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড, সর্বোচ্চ ৭ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন
সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ ডিজিটাল অপরাধ রোধে কঠোর শাস্তির বিধান রেখেছে। স্ক্যামিং, প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ, হ্যাকিং বা পরিচয় চুরির মতো অপরাধ করলে দোষী ব্যক্তিকে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের সম্মুখীন হতে হবে।
আইনজীবীদের ভূমিকা: আইনজীবী হিসেবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় স্কামিং প্রতিরোধে এবং প্রতারণার শিকারদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
স্কামিংয়ের শিকারদের সহায়তা:
# তাদের আইনি পরামর্শ দেওয়া।
# সাইবার ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানানো।
# প্রয়োজনে আদালতে মামলা করতে সাহায্য করা।
সচেতনতা তৈরি: আইনজীবীরা সেমিনার, ব্লগ, বা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে স্কামিং সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে পারেন।
নীতিমালা প্রণয়নে সহায়তা: সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী এবং সরকারের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে কার্যকর আইন প্রণয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন।
পরিশেষে: সোশ্যাল মিডিয়ার সুবিধা যেমন অসীম, তেমনি এর সঙ্গে আসে কিছু চ্যালেঞ্জ। স্কামিং এখন এক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা প্রতিরোধে আমাদের সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সচেতন হওয়া, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা, এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারই আমাদের স্কামিং থেকে রক্ষা করতে পারে। একজন আইনজীবী হিসেবে, আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি – সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং প্রতারণার শিকারদের পাশে দাঁড়ানো। স্কামিং প্রতিরোধে সম্মিলিত প্রচেষ্টাই হতে পারে এর স্থায়ী সমাধান।
আমাদের সকল আপডেট ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন।
1 Comment
অনেক অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর তথ্য দেওয়ার জন্য🌸।
আমি কন্যা সন্তানদের আইনগত অধিকার নিয়ে পরবর্তী ব্লগ লিখার অনুরোধ করছি।