Edit Template

Author name: আইনকথন.কম

প্রতারণা নাকি বিশ্বাসভঙ্গ?দন্ডবিধির ৪০৬ ও ৪২০ ধারার আসল পার্থক্য জানুন!

প্রতারণা নাকি বিশ্বাসভঙ্গ?দন্ডবিধির ৪০৬ ও ৪২০ ধারার আসল পার্থক্য জানুন!

“আমার টাকা মেরে দিয়েছে!”, “৪২০-এর মামলা দেবো!” – আর্থিক লেনদেন বা চুক্তি সংক্রান্ত ঝামেলায় পড়লে আমরা অনেকেই এই কথাগুলো বলি। কিন্তু আপনি কি জানেন, বাংলাদেশের আইনে প্রতারণা বা অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত মামলায় দন্ডবিধির ৪০৬ ধারা এবং ৪২০ ধারা দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন অপরাধের জন্য বলা হয়েছে? প্রায়শই দেখা যায়, অভিযোগের সাথে ধারার মিল থাকে না। এর ফলে মামলা দুর্বল হয়ে যায় বা প্রত্যাশিত ফলাফল আসে না। সাধারণ মানুষের জন্য এই দুটি ধারার পার্থক্য বোঝা অত্যন্ত জরুরি। চলুন, খুব সহজ ভাষায় জেনে নিই কখন কোন ধারা প্রযোজ্য হবে, এদের মূল ফারাক কোথায়, এবং এ বিষয়ে আমাদের উচ্চ আদালত কী বলেন। ভূমিকা: কেন ৪০৬ ও ৪২০ ধারা বোঝা দরকার? ধরুন, আপনার বন্ধু আপনার কাছে কিছু টাকা আপনার প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য রাখলো, কিন্তু পরে সেই টাকা সে আর ফেরত দিল না বা অন্য কোথাও খরচ করে ফেললো। অথবা, কেউ আপনাকে লোভনীয় চাকরির বা ব্যবসার কথা বলে আপনার কাছ থেকে টাকা নিল, কিন্তু আসলে এমন কোনো চাকরি বা ব্যবসাই নেই! প্রথম ঘটনাটি একরকম অপরাধ, আর দ্বিতীয়টি আরেকরকম। আমাদের দন্ডবিধি এই দুই ধরনের কাজকে আলাদাভাবে দেখে এবং তাদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ধারা ও শাস্তির বিধান রেখেছে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা দন্ডবিধির ৪০৬ ধারা (বিশ্বাসভঙ্গ) এবং ৪২০ ধারা (প্রতারণা) নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার বা পরিচিত কারো সাথে অন্যায় হলে আসলে কোন ধারায় মামলা করা উচিত। ধারা ৪০৬: আস্থার অবহেলা বা বিশ্বাসভঙ্গ (Criminal Breach of Trust) সহজ কথায়: ৪০৬ ধারা প্রযোজ্য হয় যখন আপনি কারো ওপর বিশ্বাস করে বা আস্থা রেখে আপনার কোনো সম্পদ (টাকা, জিনিসপত্র) তার কাছে গচ্ছিত রাখেন বা কোনো দায়িত্ব দেন, কিন্তু সে আপনার সেই আস্থার মর্যাদা না রেখে সেই সম্পদ বা দায়িত্ব নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে বা অন্য কাউকে দিয়ে দেয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: এখানে অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছে সম্পদ বা দায়িত্বটি আপনার বিশ্বাসের কারণে বৈধভাবেই গিয়েছিল। অপরাধটি ঘটে পরে, যখন সে সেই বিশ্বাস ভঙ্গ করে আপনার সম্পদ বা দায়িত্বের অপব্যবহার করে। কখন এই ধারা ব্যবহার হয়? বাস্তব উদাহরণ: শাস্তি: এই ধারার অধীনে অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ৩ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড বা জরিমানা বা উভয় দন্ড হতে পারে। জামিনযোগ্যতা: ৪০৬ ধারা সাধারণত জামিনযোগ্য নয়। তবে মামলার প্রাথমিক পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকেই শর্ত সাপেক্ষে জামিন কখনো কখনো পাওয়া যেতে পারে, যদিও মামলার পরিস্থিতি অনুযায়ী এটি ভিন্ন হতে পারে। প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ: এই ধারায় মামলা সফল করতে হলে আপনাকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে আপনি অভিযুক্তকে আপনার সম্পদ বিশ্বাস করে বা আস্থা রেখে দিয়েছিলেন (entrusted with property)। আপনার কাছে প্রমাণ থাকতে হবে যে সম্পদ তার কাছে আইনত গচ্ছিত ছিল এবং সে সেই বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা: আমাদের উচ্চ আদালত বিভিন্ন রায়ে ৪০৬ ধারা প্রসঙ্গে স্পষ্ট করেছেন যে, কেবল চুক্তি ভঙ্গ করাই ৪০৬ ধারা নয়। যদি প্রমাণ করা যায় যে চুক্তির অংশ হিসেবে দেওয়া কোনো সম্পদ বা টাকা বিশ্বাস করে গচ্ছিত রাখা হয়েছিল এবং সেটি পরে আত্মসাৎ করা হয়েছে, কেবল তখনই ৪০৬ ধারা প্রযোজ্য হবে। নতুবা এটি দেওয়ানি মামলার বিষয়। ধারা ৪২০: প্রতারণা (Cheating & Dishonest Inducement) সহজ কথায়: ৪২০ ধারা প্রযোজ্য হয় যখন কেউ প্রথম থেকেই খারাপ বা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে (মিথ্যা কথা বলে, ভুল তথ্য দিয়ে, সত্য গোপন করে বা ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে) আপনাকে ঠকায় এবং এই প্রতারণার মাধ্যমে আপনার কাছ থেকে টাকা বা অন্য কোনো সম্পদ হাতিয়ে নেয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: এখানে প্রতারণাকারী প্রথম থেকেই আপনাকে ঠকানোর উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করে। তার মিথ্যা বা জালিয়াতির কারণেই আপনি তাকে আপনার সম্পদ দিতে রাজি হন। অপরাধটি ঘটে সম্পদ হস্তান্তরের আগেই বা ঠিক সম্পদ হস্তান্তরের সময়, কারণ প্রতারণার উদ্দেশ্য শুরু থেকেই থাকে। কখন এই ধারা ব্যবহার হয়? বাস্তব উদাহরণ: শাস্তি: এই ধারার অধীনে অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড বা জরিমানা বা উভয় দন্ড হতে পারে। জামিনযোগ্যতা: ৪২০ ধারা জামিনযোগ্য (bailable)। অর্থাৎ, এই ধারায় মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জামিন পাওয়া যায় । প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ: ৪২০ ধারায় সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো প্রমাণ করা যে অভিযুক্তের প্রতারণার বা ঠকানোর উদ্দেশ্যটি প্রথম থেকেই ছিল। শুধুমাত্র চুক্তি ভঙ্গ হয়েছে বা টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি – এইটুকু প্রমাণ করাই যথেষ্ট নয়। আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে তার উদ্দেশ্যই ছিল আপনাকে ঠকানো এবং সেই কারণেই আপনি আপনার সম্পদ হারিয়েছেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা: উচ্চ আদালত বিভিন্ন রায়ে স্পষ্ট করেছেন যে, ৪২০ ধারার মূল ভিত্তি হলো অসৎ উদ্দেশ্য (dishonest intention) এবং সেই উদ্দেশ্যের কারণে প্রতারিত হয়ে সম্পদ হস্তান্তর (inducement to deliver property)। যদি লেনদেনের সময় প্রতারণার উদ্দেশ্য না থাকে, কেবল টাকা ফেরত না দিলেই ৪২০ ধারা হয় না। এটি সাধারণত দেওয়ানি বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। ৪০৬ বনাম ৪২০ ধারার মূল পার্থক্য (এক নজরে) বৈশিষ্ট্য ধারা ৪০৬ (বিশ্বাসভঙ্গ) ধারা ৪২০ (প্রতারণা) অপরাধের সময় আস্থার সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পর সম্পদ আত্মসাৎ বা অপব্যবহার। সম্পদ আদায়ের উদ্দেশ্যেই প্রতারণা, যা প্রথম থেকেই থাকে। উদ্দেশ্য আত্মসাতের উদ্দেশ্য পরবর্তীতে তৈরি হতে পারে। প্রতারণার ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য প্রথম থেকেই বিদ্যমান থাকে। সম্পদের দখল আপনার বিশ্বাসের ভিত্তিতে বৈধ বা আস্থামূলক দখল। প্রতারণা বা মিথ্যার মাধ্যমে অবৈধভাবে দখল। মূল কাজ আস্থার অবহেলা বা গচ্ছিত সম্পদের অপব্যবহার। মিথ্যা বা জালিয়াতি করে ঠকানো। শাস্তির মাত্রা সর্বোচ্চ ৩ বছর কারাদন্ড। সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদন্ড। জামিনযোগ্যতা জামিনযোগ্য নয় জামিনযোগ্য। টাকা ধার নিয়ে ফেরত না দিলে বা চুক্তিভঙ্গ করলে কোন ধারা? এটি একটি খুব সাধারণ প্রশ্ন। সহজ উত্তর হলো: উচ্চ আদালতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা: বাংলাদেশের উচ্চ আদালত বিভিন্ন মামলায় ৪০৬ ও ৪২০ ধারার প্রয়োগ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো: ১. ধারা ৪০৬ সম্পর্কিত: ২. ধারা ৪২০ সম্পর্কিত: এছাড়াও বাংলাদেশের উচ্চ আদালত বিভিন্ন মামলায় ৪০৬ ও ৪২০ ধারার প্রয়োগ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যা নিচে দেয়া হলোÑ প্রতারণা বা বিশ্বাসভঙ্গের শিকার হলে আপনার করণীয়: ১. প্রমাণ সংগ্রহ: সকল প্রকার লিখিত চুক্তি, মেসেজ, ইমেইল, টাকা লেনদেনের রসিদ বা প্রমাণ, সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র এবং সাক্ষীদের তালিকা ও বক্তব্য সংগ্রহ করুন। এগুলো আপনার মামলার মূল ভিত্তি। ২. আইনজীবীর পরামর্শ: যত দ্রুত সম্ভব একজন অভিজ্ঞ ফৌজদারি আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন। তিনি আপনার ঘটনা শুনে কোন ধারায় মামলা করলে সেটি শক্তিশালী হবে এবং কীভাবে প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে সে বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দিতে পারবেন। ৩. থানায় অভিযোগ: আইনজীবীর পরামর্শ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট থানায় এজাহার (FIR) দায়ের করুন অথবা আদালতে সরাসরি মামলা (Complaint Case) দায়েরের জন্য আবেদন করুন। কিছু সচরাচর জিজ্ঞাসা (FAQ): উপসংহার: আপনার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হোন দন্ডবিধির ৪০৬ ও ৪২০ ধারা দুটোই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি ধারার মূল পার্থক্য হলো অপরাধীর উদ্দেশ্য কখন তৈরি হয়েছিল এবং সম্পদ কীভাবে তার দখলে এসেছিল। বিশ্বাসভঙ্গ মানে হলো আগে বিশ্বাস ছিল, পরে সেটি ভাঙা হয়েছে; আর প্রতারণা মানে

প্রতারণা নাকি বিশ্বাসভঙ্গ?দন্ডবিধির ৪০৬ ও ৪২০ ধারার আসল পার্থক্য জানুন! Read Post »

চেক ডিজওনার মামলায় আসামীর জেল হলেই কি সব শেষ?

চেক ডিজওনার মামলায় আসামীর জেল হলেই কি সব শেষ?

চেক ডিজওনার বা চেক প্রত্যাখ্যাত হওয়া আজকাল খুবই পরিচিত একটি ঘটনা। অনেকেই হয়তো জানেন যে, চেক ডিজওনার হলে সংশ্লিষ্ট আইনের (বিশেষ করে হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন, ১৮৮১ এর ১৩৮ ধারা) আওতায় মামলা করা যায় এবং মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে জেল বা জরিমানা দুটোই হতে পারে। কিন্তু একটা প্রশ্ন অনেকের মনেই ঘুরপাক খায় – আসামী যদি মামলায় জেল খেটে ফেলে, তাহলে কি পাওনাদার তার টাকা ফেরত পাবে? নাকি জেল খাটার মধ্য দিয়েই সব শেষ হয়ে যায়? এই লেখায় আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করব- অনেকের ধারণা, চেক ডিজওনার মামলায়, একবার জেল খেটে ফেললেই দায়মুক্তি মেলে। কিন্তু আইন কী বলছে? পাওনাদারের টাকা আদায়ের উপায় কি তাহলে আর কিছুই থাকলো না?  চলুন, আইনি প্রেক্ষাপটে বিষয়টি সহজভাবে বোঝার চেষ্টা করি। সাধারণ ধারণা বনাম আইনি বাস্তবতা: জেল খাটা কি টাকা পরিশোধের বিকল্প? এই প্রশ্নটি অধিকাংশ মানুষের মনেই ঘুরপাক খায়।একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হলো, চেক ডিজওনার মামলায় আসামীকে যে কারাদণ্ড দেওয়া হয় (যা অনেক সময় জরিমানার অনাদায়ে ভোগ করতে হয়), সেটি ভোগ করলেই টাকার দায় থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অর্থাৎ, জেল খাটলেই আর টাকা দিতে হবে না। কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। আইনের চোখে, চেক ডিজওনার মামলায় আদালত যে জরিমানা করেন (যা সাধারণত চেকে উল্লেখিত টাকার অংক বা তার দ্বিগুণ পর্যন্ত হতে পারে), সেটা এক প্রকার আর্থিক দণ্ড। এই আর্থিক দণ্ড বা জরিমানা পরিশোধ করা আসামীর জন্য বাধ্যতামূলক। যদি আসামী জরিমানার টাকা পরিশোধ না করে, তবেই আদালত বিকল্প হিসেবে কারাদণ্ড দেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, এই বিকল্প কারাদণ্ড ভোগ করা মানে এই নয় যে জরিমানার টাকা মওকুফ হয়ে গেল। আসামী যখন জরিমানার পরিবর্তে জেল খাটে, তখন সে কেবল জরিমানা পরিশোধ না করার পরিণতির অংশ হিসেবে শারীরিক দণ্ড ভোগ করে। কিন্তু জরিমানার টাকা পরিশোধ করার যে বাধ্যবাধকতা, সেটা থেকেই যায়। এক কথায়, জেল খাটাটা জরিমানার বিকল্প পরিশোধ নয়, বরং জরিমানা পরিশোধ না করার শাস্তি। তাই, জেল খেটেও আসামীর জরিমানার টাকা পরিশোধ করতেই হবে। এর থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই, যদি না পাওনাদার নিজে থেকে টাকা আদায়ের প্রক্রিয়া থেকে সরে আসেন। যদি আসামী টাকা পরিশোধ না করে জেদ ধরে বসে থাকে, তাহলে তার জন্য ফলাফল হতে পারে আরও ভয়াবহ – সারাজীবন জেলেই থাকতে হতে পারে, যদি তার সম্পত্তি থেকে টাকা আদায় করা সম্ভব না হয়। জেল খাটার পরেও টাকা আদায়ের আইনি প্রক্রিয়া– ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৮৬ ধারা এখন প্রশ্ন হলো, আসামী জেল খেটে ফেলার পর পাওনাদার কীভাবে তার টাকা (আদালত কর্তৃক ধার্যকৃত জরিমানার টাকা) আদায় করবেন? এখানেই ফৌজদারী কার্যবিধির একটি বিশেষ ধারা পাওনাদারকে সাহায্য করবে। যে আদালত আসামিকে চেক ডিজওনার মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে জেল ও জরিমানা (বা শুধু জরিমানা) দিয়েছেন, সেই আদালতেই পাওনাদার বা বাদীপক্ষ একটি আবেদন করতে পারেন। এই আবেদনটি করা হয় ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ (Code of Criminal Procedure, 1898) এর ৩৮৬ ধারার বিধান অনুযায়ী। ধারা ৩৮৬ এর উপধারা (১)(বি) অনুযায়ী, পাওনাদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত আসামীর (যাকে এখানে ‘দায়িক’ বা যিনি টাকা দিতে বাধ্য) কাছ থেকে জরিমানার টাকা আদায় করার জন্য একটি ‘লেভী ওয়ারেন্ট‘ (Levy Warrant) ইস্যু করবেন। এই লেভী ওয়ারেন্টে সাধারণত আসামীর যে সম্পত্তি থেকে টাকা আদায় করা যেতে পারে, সেটির বিবরণ থাকে। আদালত এই লেভী ওয়ারেন্টটি কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রেরণ করেন। আমাদের দেশে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হলেন জেলা প্রশাসক বা ডিসি সাহেব। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ভূমিকা: সরকারী দাবী আদায় আইন, ১৯১৩ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যখন আদালতের ইস্যু করা লেভী ওয়ারেন্ট পৌঁছায়, তখন এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেয়। ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৮৬ ধারার বিধান অনুযায়ী, ফৌজদারী আদালত কর্তৃক আরোপিত জরিমানার টাকা আদায়ের জন্য ইস্যুকৃত লেভী ওয়ারেন্টকে দেওয়ানী আদালতের একটি ‘ডিক্রী’ (Decree) হিসাবে গণ্য করা হয়। দেওয়ানী আদালতের ডিক্রী মানে হলো একটি আনুষ্ঠানিক আদেশ যা পক্ষগুলোর অধিকার ও বাধ্যবাধকতা নির্দিষ্ট করে এবং এটি কার্যকর করার আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরী হয়। যেহেতু এই টাকা এখন আদালতের আদেশের মাধ্যমে আদায়যোগ্য, তাই এটি এক প্রকার ‘সরকারী দাবী’ (Government Demand) হিসাবে বিবেচিত হয়। আর এই সরকারী দাবী আদায়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট আইন রয়েছে – ‘সরকারী দাবী আদায় আইন, ১৯১৩‘ (Public Demands Recovery Act, 1913)। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এই লেভী ওয়ারেন্ট প্রাপ্তির পর সরকারী দাবী আদায় আইন, ১৯১৩ এর বিধান অনুসরণ করে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এই আইনের অধীনে টাকা আদায়ের জন্য একজন ‘সার্টিফিকেট অফিসার’ দায়িত্ব পালন করেন। সরকারী দাবী আদায় আইনের ১৪ ধারায় টাকা আদায়ের কয়েকটি পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। সার্টিফিকেট অফিসার এই ধারা অনুযায়ী নিচের এক বা একাধিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন: ১.  সম্পত্তি ক্রোক ও বিক্রয়: দায়িকের (আসামীর) স্থাবর সম্পত্তি (যেমন জমি, বাড়ি) অথবা অস্থাবর সম্পত্তি (যেমন গাড়ি, ব্যাংক হিসাব, আসবাবপত্র ইত্যাদি) ক্রোক বা আটক করে বিক্রয় করে সেই টাকা থেকে সরকারী দাবী (জরিমানার টাকা) আদায় করা। সম্পত্তি ক্রোক ছাড়াও বিক্রয় করা যেতে পারে, যদি আইনত এর সুযোগ থাকে। ২.  ডিক্রী ক্রোক: দায়িক যদি অন্য কারো কাছ থেকে কোনো টাকা বা সম্পত্তি পাওয়ার জন্য কোনো আদালতের ডিক্রী পেয়ে থাকেন, তবে সেই ডিক্রীটিও ক্রোক করে টাকা আদায় করা যেতে পারে। ৩.  দেনাদারকে গ্রেফতার: সরকারী দাবী আদায় আইনের অধীনে দায়িক বা দেনাদারকে গ্রেফতার করে দেওয়ানী কয়েদে আটক রাখা যেতে পারে, যদি তার কোনো সম্পত্তি না পাওয়া যায়। সার্টিফিকেট অফিসার এই পদ্ধতিগুলোর যেকোনো একটি বা সবগুলো প্রয়োগ করে জরিমানার টাকা আদায়ের উদ্যোগ নিবেন। সম্পত্তি হস্তান্তর সংক্রান্ত জটিলতা ও আইনি সমাধান টাকা আদায়ের প্রক্রিয়ায় অনেক সময় একটি জটিলতা দেখা দেয়। আসামীরা পাওনাদারকে ঠকানোর উদ্দেশ্যে বা শাস্তি এড়ানোর জন্য তাদের সম্পত্তি অন্যদের কাছে বিক্রি বা হস্তান্তর করে দিতে পারে। এই ক্ষেত্রে কী হবে? আইন এখানে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়:  * মামলা দায়েরের আগে সম্পত্তি বিক্রি: যদি আসামী চেক ডিজওনার মামলা দায়ের হওয়ার আগেই তার কোনো সম্পত্তি বিক্রি করে দেন, তবে সেই ক্রেতার স্বার্থ সাধারণত সুরক্ষিত থাকে। কারণ, মামলা হওয়ার আগে যিনি আইনত সম্পত্তি কিনে নিয়েছেন, তার অধিকার এখানে অগ্রগণ্য হবে এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সেই সম্পত্তি ক্রোক বা বিক্রয়ের উদ্যোগ নাও নিতে পারেন।  * মামলা চলাকালীন সম্পত্তি বিক্রি: কিন্তু যদি আসামী চেক ডিজওনার মামলা চলাকালীন সময়ে পাওনাদারকে বঞ্চিত করার অসৎ উদ্দেশ্যে তার সম্পত্তি অন্য কারো কাছে বিক্রি বা বন্ধক রাখেন, তবে সেই ক্ষেত্রে আইন ভিন্ন কথা বলে। ধরে নেওয়া হয় যে, আসামী যেহেতু জানতেন তার বিরুদ্ধে একটি আইনি প্রক্রিয়া চলছে এবং তাকে টাকা পরিশোধ করতে হতে পারে, তাই এই হস্তান্তরটি টাকা আদায়কে বাধাগ্রস্ত করার কৌশল হিসেবে করা হয়েছে। এমন ক্ষেত্রে, লেভী ওয়ারেন্টের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে না। অর্থাৎ, মামলা চলাকালীন সময়ে হস্তান্তর করা সম্পত্তিও ক্রোক ও বিক্রয় করে টাকা আদায় করা যাবে, (provided the transfer was not bona fide or with knowledge of the claim). এখানে মূল নীতি হলো, আইন চায় না যে কোনো

চেক ডিজওনার মামলায় আসামীর জেল হলেই কি সব শেষ? Read Post »

দেওয়ানী আর ফৌজদারি মামলা এক জিনিস নয় – জানুন কোন পরিস্থিতিতে কোনটি প্রযোজ্য

দেওয়ানী আর ফৌজদারি মামলা এক জিনিস নয় – জানুন কোন পরিস্থিতিতে কোনটি প্রযোজ্য

দেওয়ানী আর ফৌজদারি মামলা মোবারক হোসেন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, তাঁর পৈতৃক জমিতে হঠাৎ করে পাশের গ্রামের লোকজন বেড়া দিয়ে রেখেছে। তিনি থানায় গেলেন, কিন্তু পুলিশ বলল, “এটা দেওয়ানী বিষয়, আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারব না।” অন্যদিকে, শেলী বেগমের স্বামী তাকে মারধর করেছে—তিনি থানায় গেলে সঙ্গে সঙ্গে জিডি ও মেডিকেল করিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হলো। এই দুইটা ঘটনাই আইনগত সমস্যা, কিন্তু প্রতিক্রিয়া একেবারেই আলাদা কেন? এর উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের বুঝতে হবে দেওয়ানী ও ফৌজদারি আইনের মধ্যে মূল পার্থক্য কোথায়? আইন সাধারণ মানুষের জন্য, কিন্তু অনেক সময় এর জটিলতা দেখে আমরা ঘাবড়ে যাই। অথচ কিছু মৌলিক বিষয় জানলেই আমরা আমাদের অধিকার রক্ষায় সঠিক পথে এগোতে পারি। দেওয়ানী এবং ফৌজদারি মামলা সেই মৌলিক বিষয়গুলোরই অংশ। চলুন, সহজ ভাষায় জেনে নিই কখন আপনার দেওয়ানী প্রতিকার প্রয়োজন, আর কখন আইনের দৃষ্টিতে সেটা ফৌজদারি অপরাধ। দেওয়ানী মামলা মানে কী? সহজ কথায়, দেওয়ানী মামলা হলো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার অধিকার বা সম্পত্তির বিরোধ সংক্রান্ত বিষয়। এখানে কোনো অপরাধ ঘটে না, বরং কারো অধিকার ক্ষুণ্ন হয় বা চুক্তির বরখেলাপ হয়। যেমন, আপনি আপনার বন্ধুকে কিছু টাকা ধার দিলেন, কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে সে টাকা ফেরত দিচ্ছে না। এটা একটা দেওয়ানী বিরোধ। আপনার টাকা ফেরত পাওয়ার অধিকার আছে, এবং আইন আপনাকে সেই অধিকার আদায়ে সাহায্য করবে। দেওয়ানী মামলার মূল উদ্দেশ্য হলো ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে তার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দেওয়া, অথবা বিরোধের একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান করা। এখানে কাউকে শাস্তি দেওয়া মূল লক্ষ্য নয়। দেওয়ানী মামলার কিছু সাধারণ উদাহরণ হলো: জমি বা সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ: কে জমির মালিক, সীমানা সংক্রান্ত সমস্যা, জোরপূর্বক দখল (তবে নতুন আইন আসার পর এতে পরিবর্তন এসেছে, যা আমরা পরে আলোচনা করব)। উত্তরাধিকার সংক্রান্ত মামলা: পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ভাইবোন বা আত্মীয়দের মধ্যে বিরোধ। চুক্তি ভঙ্গ: কারো সাথে কোনো চুক্তি করলেন (যেমন বাড়ি ভাড়া বা ব্যবসার চুক্তি), কিন্তু অন্য পক্ষ তা মানছে না।  পারিবারিক বিষয়: বিবাহবিচ্ছেদ (তালাক), খোরপোষ (স্ত্রীর ভরণপোষণ), সন্তানের guardianship বা হেফাজত কে পাবে—এসবই দেওয়ানী মামলার আওতাভুক্ত। দেনা–পাওনা বা অর্থ আদায়: পাওনা টাকা আদায়, ব্যাংকের ঋণ সংক্রান্ত মামলা। মানহানির মামলা: কেউ যদি আপনার সম্মানহানি করে মিথ্যা তথ্য ছড়ায়, আপনি তার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে দেওয়ানী মামলা করতে পারেন। দেওয়ানী মামলাগুলো সাধারণত সিভিল প্রসিডিউর কোড, ১৯০৮ (Civil Procedure Code, CPC) অনুযায়ী পরিচালিত হয়। আদালত এখানে সাক্ষী, দলিলপত্র ইত্যাদি যাচাই করে নির্ধারণ করেন কে সঠিক এবং কার দাবি আইনসম্মত। এরপর আদালত আদেশ দেন, যা পালন করা সবার জন্য বাধ্যতামূলক। যেমন, আদালত রায় দিতে পারেন যে জমিটি আপনার, অথবা অন্য পক্ষকে আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ফৌজদারি মামলা কোনগুলো? অন্যদিকে, ফৌজদারি মামলা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। এখানে ব্যক্তিগত অধিকারের চেয়ে সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যখন কেউ এমন কোনো কাজ করে যা রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়েছে—যেমন চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ, মারামারি, প্রতারণা—তখন সেটা ফৌজদারি অপরাধ। ফৌজদারি মামলার উদ্দেশ্য হলো অপরাধীকে চিহ্নিত করা এবং তাকে শাস্তি দেওয়া, যাতে সমাজে অপরাধ প্রবণতা কমে এবং মানুষ নিরাপদ বোধ করে। এখানে রাষ্ট্র বা সরকার নিজেই বাদী হয়ে থাকে, কারণ অপরাধকে কেবল ব্যক্তিগত বিষয় নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হয়। যদিও অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি এজাহার (FIR) দায়ের করেন বা আদালতে সরাসরি অভিযোগ করেন, কিন্তু মূল মামলাটি চলে রাষ্ট্র বনাম অভিযুক্ত ব্যক্তির মধ্যে। ফৌজদারি মামলার কিছু বহুল প্রচলিত উদাহরণ হলো: শারীরিক আঘাত বা সহিংসতা: কাউকে মারধর করা, গুরুতর জখম করা, হত্যা চেষ্টা বা হত্যাকাণ্ড। সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধ: চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, দস্যুতা, চাঁদাবাজি। যৌন অপরাধ: ধর্ষণ, যৌন হয়রানি। প্রতারণা ও জালিয়াতি: মিথ্যা কথা বা দলিল দেখিয়ে কাউকে ঠকানো। মাদক দ্রব্য সংক্রান্ত অপরাধ: মাদক বেচাকেনা বা সেবন। নারী ও শিশু নির্যাতন: যৌতুকের জন্য মারধর, এসিড নিক্ষেপ, শিশু অপহরণ। ভূমি জবরদখল: (নতুন আইন অনুযায়ী এটি এখন স্পষ্টতই ফৌজদারি অপরাধ)। ফৌজদারি মামলাগুলো পরিচালিত হয় দণ্ডবিধি, ১৮৬০ (Penal Code) এবং ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ (Code of Criminal Procedure, CrPC) এবং কিছু স্পেশাল আইন অনুযায়ী। দণ্ডবিধি বিভিন্ন অপরাধের সংজ্ঞা দেয় এবং সেগুলোর শাস্তি নির্ধারণ করে। ফৌজদারি কার্যবিধি বলে দেয় কীভাবে তদন্ত হবে, কীভাবে আদালতে বিচার হবে, এবং কীভাবে শাস্তি কার্যকর করা হবে। ফৌজদারি মামলায় প্রমাণ হতে হয় ‘reasonable doubt’ বা যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের ঊর্ধ্বে। অর্থাৎ, আদালতকে প্রায় নিশ্চিত হতে হয় যে অভিযুক্ত ব্যক্তিই অপরাধ করেছেন, তবেই তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। শাস্তি হতে পারে জরিমানা, কারাদণ্ড, বা ক্ষেত্রবিশেষে মৃত্যুদণ্ড। একই ঘটনায় দুই মামলা হয় কি? হলে কিভাবে? আইনের এই দুই ধরনের প্রকৃতি বোঝার পর মনে প্রশ্ন আসতে পারে, একই ঘটনা থেকে কি দেওয়ানী এবং ফৌজদারি দুই ধরনের মামলাই হতে পারে? উত্তর হলো—হ্যাঁ, হতে পারে। মোবারক হোসেনের উদাহরণটিই আবার দেখি। জমি দখল করা মূলত সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ, যা দেওয়ানী বিষয়। তিনি আদালতে দেওয়ানী মামলা করে জমির দখল এবং মালিকানা ফিরে পেতে পারেন। কিন্তু যদি যারা জমি দখল করেছে তারা মোবারক হোসেনকে জমিতে ঢুকতে বাধা দেয়, ভয় দেখায়, বা বলপ্রয়োগ করে তাকে শারীরিক আঘাত করে, তাহলে দখল করার দেওয়ানী বিষয়ের সাথে সাথে ভয় দেখানো, মারধর করা ইত্যাদি ফৌজদারি অপরাধও সংঘটিত হলো। এক্ষেত্রে মোবারক হোসেন দেওয়ানী আদালতে জমির মালিকানা বা দখল ফিরে পাওয়ার জন্য মামলা করতে পারেন, এবং একই সাথে বা আলাদাভাবে থানায় মারধর বা ভয় দেখানোর জন্য ফৌজদারি মামলাও করতে পারেন। ফৌজদারি মামলায় অপরাধীদের শাস্তি হতে পারে, আর দেওয়ানী মামলায় তিনি তার হারানো অধিকার বা সম্পত্তির দখল ফিরে পেতে পারেন। আরেকটি উদাহরণ হতে পারে চেক ডিজঅনার। আপনি কাউকে চেক দিলেন কিন্তু অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় চেকটি প্রত্যাখ্যাত হলো। পাওনাদার তার টাকা আদায়ের জন্য আপনার বিরুদ্ধে দেওয়ানী মামলা করতে পারেন। কিন্তু চেক ডিজঅনার বর্তমানে একটি ফৌজদারি অপরাধও বটে (নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী)। ফলে আপনার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও হতে পারে এবং তাতে আপনার জেল বা জরিমানা হতে পারে। এখানে দেওয়ানী মামলা টাকার জন্য, আর ফৌজদারি মামলাটা অপরাধ হিসেবে চেক ডিজঅনার করার জন্য। নতুন ভূমি আইন ও এর তাৎপর্য ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ আমাদের দেশে একটি বড় সমস্যা। আগে অনেক ক্ষেত্রেই জমি দখল বা জাল দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার মতো বিষয়গুলো প্রধানত দেওয়ানী মামলা হিসেবে দেখা হতো, যার নিষ্পত্তি হতে বছরের পর বছর লেগে যেত। দখলদার হয়তো দিব্যি বহাল তবিয়তে থাকত। এই দীর্ঘসূত্রিতা কমাতে এবং ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ দমনে সরকার নতুন আইন প্রণয়ন করেছে। “ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩” এই ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই আইন অনুযায়ী, এখন থেকে অনেকগুলো ভূমি সম্পর্কিত কাজকে সুনির্দিষ্টভাবে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: জোরপূর্বক বা অবৈধভাবে ভূমি দখল করা: এটি এখন একটি গুরুতর অপরাধ। প্রতারণামূলক দলিল তৈরি বা ব্যবহার করা: জাল কাগজপত্র বানিয়ে জমি বা সম্পত্তি নিজের নামে করে নেওয়া।

দেওয়ানী আর ফৌজদারি মামলা এক জিনিস নয় – জানুন কোন পরিস্থিতিতে কোনটি প্রযোজ্য Read Post »

Child Act,গ্রেপ্তার হওয়া শিশু: অধিকার, আদালত ও আশার পথ ( শিশু আইন ২০১৩ )Child Act

গ্রেপ্তার হওয়া শিশু: অধিকার, আদালত ও আশার পথ ( শিশু আইন ২০১৩ )

গ্রেপ্তার হওয়া শিশু একটি শিশুর গ্রেপ্তারের গল্প— গ্রেফতার এই শব্দ দুটি শুনলেই হয়তো বড় কোনো অপরাধের চিত্র মনে আসে। কিন্তু বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই চিত্রটা ভিন্ন হয়।এক বিকেলে, ঢাকার এক মহল্লায় , ১৩ বছরের শুভ তার এক বন্ধুর হাতে থাকা পুরনো মোবাইল ফোনটি নিয়ে মজা করছিল। এটা দেখে দোকানদার সন্দেহ করে ফোনটি চুরি করা হয়েছে বলে চেঁচামেচি শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুভকে পুলিশ ভ্যানে উঠানো হয়— মুখে আতঙ্ক, চোখে জল। শুভর বাবা-মা যখন জানতে পারলেন, তখন শুভ থানায়  শুভকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় কোনো আইনজীবী বা অভিভাবককে খবর দেওয়া হয়নি। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার — থানায় শুভর কাছ থেকে ‘স্বীকারোক্তি’ও নেওয়া হয়েছে!এটা কি হওয়ার কথা? গল্পটা প্রায়ই কিন্তু এই রকমই হয়।যেখানে শিশুর প্রতি স্নেহ, বোঝাপড়া এবং আইনের সংবেদনশীল অবস্থায় থাকার কথা, সেখানে অনেক সময়ই দেখা যায় অবহেলা, ভয়ভীতি এবং আইনের লঙ্ঘন। শুভর গল্প আমাদের চোখ খুলে দেয় — শিশুরা আসলে কী ধরনের বিপদের মুখোমুখি হয়। শিশু আইন, ২০১৩ অনুযায়ী গ্রেপ্তার হওয়া শিশুর অধিকার বাংলাদেশের শিশু আইন, ২০১৩ (Child Act, 2013) স্পষ্টভাবে বলে দেয়, ১৮ বছরের নিচে কোনো ব্যক্তিকে “শিশু” হিসেবে বিবেচনা করা হবে। গ্রেপ্তারের সময় শিশুর জন্য বিশেষ সুরক্ষা বাধ্যতামূলক। মূল বিধানগুলো হলো: ধারা ৩৪: গ্রেপ্তারের সময় শিশুকে শিশু হিসেবেই গণ্য করতে হবে এবং তার বয়স যাচাই করতে হবে। ধারা ৩৬: গ্রেপ্তারের পর শিশুকে পৃথক হেফাজতে রাখতে হবে। সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে রাখা যাবে না। ধারা ৩৯: শিশুকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিশু আদালতে হাজির করতে হবে। ধারা ৪৯ ও ৫১: শিশুর বিরুদ্ধে অভিযোগ হলে, তদন্ত, বিচার এবং শাস্তি সবকিছুতেই শিশু বান্ধব ব্যবস্থা রাখতে হবে। জামিন সংক্রান্ত বিষয়: ধারা ৪৯(১): শিশুর গ্রেপ্তারের পর সাধারণ নীতিমালা হলো তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া, যদি না গুরুতর কারণ দেখানো হয় কেন মুক্তি দেওয়া যাচ্ছে না। ধারা ৫০: শিশু আদালত জামিন দিতে বাধ্য, যদি শিশু সমাজে ফেরার পর অপরাধ করার সম্ভাবনা কম থাকে বা শিশুর মঙ্গল বিবেচনায় জামিন উপযুক্ত হয়।সুতরাং শিশুর জন্য জামিন হওয়া প্রাথমিক অধিকার — শাস্তির ব্যবস্থা নয়, পুনর্বাসনের সুযোগ নিশ্চিত করা। গ্রেপ্তারের পর শিশুর মৌলিক অধিকার বাংলাদেশের সংবিধানও শিশুর অধিকার সুরক্ষিত করেছে।সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদে বলা আছে:কোনো শিশুকে অমানবিক, নিষ্ঠুর বা লাঞ্ছনাকর শাস্তি দেওয়া যাবে না।” শিশু আইনের পাশাপাশি সংবিধানও পুলিশের দায়িত্বকে বাড়িয়ে দিয়েছে — শিশুর প্রতি সহানুভূতি ও সম্মান বজায় রাখতে হবে। উচ্চ আদালতের রায়: শিশুর মানবিক অধিকার নিশ্চিত করার নির্দেশনা– বাংলাদেশের উচ্চ আদালত বারবার শিশুদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে সংবেদনশীল আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। কিছু উল্লেখযোগ্য রায়: State vs Md. Rony (Criminal Appeal No. ৬৭/২০১৫): আদালত বলেন, “শিশুদের সঙ্গে আচরণ হতে হবে মাতৃস্নেহের মতো। বিচার বা তদন্তে শিশুর পুনর্বাসনই সর্বাগ্রে বিবেচিত হবে।” BLAST & Others vs Government of Bangladesh (Writ Petition No. ৫৬৮৪/২০১০): আদালত নির্দেশ দেন, শিশুর গ্রেপ্তারে আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং থানার কর্মীদের বাধ্যতামূলক শিশু অধিকার প্রশিক্ষণ নিতে হবে। State vs Md. Rubel (২০১৮): রায়ে বলা হয়, শিশু আসামিদের জামিনের আবেদন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পন্ন করতে হবে। শিশুকে দীর্ঘদিন আটক রাখা সংবিধান পরিপন্থী। বাস্তবতা: আইনের চেয়ে বাস্তব অনেক পিছিয়ে বিভিন্ন আইন ও সনদে শিশুদের জন্য নিরাপত্তা থাকলেও বাস্তবে অবস্থা অনেক সময় ভয়াবহ হয়ে দেখা দেয়।UNICEF বাংলাদেশ ২০২৩ সালের এক সমীক্ষায় প্রকাশ: ৪৩% শিশু থানায় গ্রেপ্তারের সময় মৌলিক অধিকার সম্পর্কে অবগত হয়নি। ৩৫% শিশু আইনি সহায়তা ছাড়াই স্বীকারোক্তি দিয়েছে। ৩২% শিশু সাধারণ সেলে বড় আসামিদের সঙ্গে ছিল — যা স্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন। (সূত্র: UNICEF Bangladesh, Child Justice Report 2023) কেন শিশুরা অন্যায়ের শিকার হয়: চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা শিশুদের গ্রেপ্তারে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, পুলিশের শিশু অধিকার বিষয়ে অপ্রতুল প্রশিক্ষণ।পৃথক সেল বা হেফাজত ঘরের অভাব। গ্রেপ্তারের সময় আইনজীবী বা অভিভাবক উপস্থিত না থাকা।অভিভাবকদের আইনি সচেতনতার অভাব। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার কারণে শিশুদের অনর্থক আটক থাকা। আশার আলো: কীভাবে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন সংগঠনের প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে: কিছু থানায় চাইল্ড ডেস্ক স্থাপন। পুলিশ সদস্যদের জন্য শিশু অধিকার প্রশিক্ষণ শুরু। শিশু আদালতে আলাদা শুনানি সময় নির্ধারণ। জেলা আদালতে প্রবেশন অফিসার নিয়োগের উদ্যোগ। একটি পরিসংখানে দেখা গ্যাছে অধিকাংশ শিশু আদালতের বিচারকগণ বলেছেন- আমরা এখন শিশুকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাই না; তাদের সাথে আন্তরিকভাবে কথা বলি।”এটা পরিবর্তনের এক উজ্জ্বল ইঙ্গিত। গ্রেপ্তার হওয়া শিশু: সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ) ১. শিশু কে বলা হয়? —- ১৮ বছরের নিচে সবাইকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়। (শিশু আইন, ২০১৩, ধারা ৪) ২. শিশু গ্রেপ্তারের সময় কী করণীয়?—- শিশুর অভিভাবককে অবহিত করা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ নিশ্চিত করা। ৩. জামিন পাওয়ার সুযোগ কেমন?— শিশুদের ক্ষেত্রে জামিন প্রধান নীতি। গুরুতর কারণ ছাড়া জামিন না দেয়া যাবে না। (ধারা ৪৯) ৪. শিশুকে কোথায় রাখা হয়?— পৃথক শিশুবান্ধব হেফাজতে, সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে নয়। ৫. গ্রেপ্তারের সময় আইনজীবী থাকা কি বাধ্যতামূলক? –হ্যাঁ, শিশুর পক্ষ থেকে আইনজীবী বা সামাজিক কর্মী উপস্থিত থাকা উচিত। ৬. পুলিশের নির্যাতন হলে কী করা যায়?— শিশু আদালতে অভিযোগ করা যায় এবং প্রতিকার চাওয়া যায়। ৭. ১৬ বছরের শিশু কী বড়দের আদালতে যাবে?— না, বিশেষ শিশু আদালতে শুনানি হবে। ৮. শিশুর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হলে কী হবে?— অভিযোগ খারিজ হবে এবং শিশুকে পুনর্বাসনের সুযোগ দেওয়া হবে। ৯. জামিন না পেলে শিশুর কী হবে? — আদালত নির্দিষ্ট কারণ ব্যতীত জামিন না দিলে বিকল্প ব্যবস্থার ব্যবস্থা করতে হবে। ১০. শিশু আইন ভাঙলে পুলিশের শাস্তি হয় কি?— হ্যাঁ, দায়িত্বে অবহেলা করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। উপসংহার: শিশুদের সম্ভাবনার পথে ফিরিয়ে আনা শুভর মতো হাজার হাজার শিশুর জীবন নির্ভর করে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর।একটা ছোট ভুল কিংবা পুলিশি অজ্ঞতার কারণে কোনো শিশুর জীবন নষ্ট হয়ে যাওয়া মানবতার চরম পরাজয়। গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের অপরাধী হিসেবে নয়, পুনর্গঠনের সম্ভাবনা হিসেবে দেখতে হবে। আমাদের আইন, আদালত এবং সমাজকে শিশুদের প্রতি আরও সংবেদনশীল হতে হবে। শুভদের গল্প যেন কাঁদিয়ে থেমে না যায়। শুভরা যেন এগিয়ে যায়, সম্ভাবনার আলোয়।

গ্রেপ্তার হওয়া শিশু: অধিকার, আদালত ও আশার পথ ( শিশু আইন ২০১৩ ) Read Post »

মুসলিম নারীর তালাকের অধিকার

মুসলিম নারীর তালাকের অধিকার

মুসলিম নারীর তালাকের অধিকার আমাদের সমাজে “তালাক” শব্দটি শুনলেই বেশিরভাগ মানুষের মনে পুরুষের একচেটিয়া অধিকার মনে হয়। অথচ ইসলাম নারীকে শুধু সম্মানই নয়, বিবাহবিচ্ছেদের সুরক্ষিত পথও দিয়েছে। বাংলাদেশে বসবাসরত একজন মুসলিম নারী কীভাবে তালাক নিতে পারেন, আদালতের দৃষ্টিভঙ্গি কী, কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামের ভূমিকা কতটা—এই লেখায় সেসব প্রশ্নের জবাব থাকছে সহজ ভাষায়। ইসলাম কি নারীদের তালাকের অধিকার দিয়েছে?হ্যাঁ, তবে ‘খুলা’ নামেইসলামে নারীর বিবাহবিচ্ছেদের অন্যতম পন্থা হলো খুলা। এখানে স্ত্রী সম্পর্ক বিচ্ছেদের ইচ্ছা প্রকাশ করে, এবং স্বামীর সম্মতিতে দেনমোহর বা কিছু আর্থিক সুবিধা ত্যাগ করে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।তালাকের অধিকার পুরোপুরি নারীর হাতে না থাকলেও ইসলামিক শরিয়াহ ও আধুনিক আইনে নারীর পক্ষ থেকে বিবাহবিচ্ছেদের একাধিক উপায় রয়েছে—খুলা (Khula)তাওফিজ তালাক (Delegated Divorce)ফাসখ তালাক (Judicial Divorce) কাবিননামার ১৮ নম্বর কলাম ও তাফবিজ তালাকতালাকের অধিকার নারীকে দেওয়া হলে কী হয়?কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে যদি লেখা থাকে—“স্ত্রীকে তালাক প্রদানের অধিকার প্রদান করা হলো”—তবে নারী নিজেই তার স্বামীকে তালাক দিতে পারেন। একে বলা হয় তাওফিজ  তালাক বা স্বামীর পক্ষ থেকে নারীর প্রতি তালাকের ক্ষমতা অর্পণ।যদি ১৮ নম্বর কলাম খালি থাকে?এ ক্ষেত্রে তালাক কার্যকর করার একমাত্র পথ হয়—খুলা বা আদালতের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ (Judicial Divorce)। অনেক নারী এই কলামের গুরুত্ব না বুঝে তা খালি রেখে দেন, ফলে পরবর্তীতে তালাক নিতে জটিলতার মুখে পড়েন। একজন নারী কীভাবে তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদ চাইতে পারেন?১. খুলা: স্বামীর সম্মতির ভিত্তিতেস্ত্রী যদি স্বামীর সাথে আর বসবাস করতে না চান, তবে তিনি খুলার জন্য আবেদন করতে পারেন। স্বামী সম্মত হলে দেনমোহর ফেরত দিয়ে তালাক কার্যকর হয়।২. পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ (Judicial Divorce)যদি স্বামী রাজি না হন বা নির্যাতনের প্রমাণ থাকে, তবে নারী পারিবারিক আদালতে মামলা করতে পারেন। কারণ হিসেবে দেখাতে হবে- মামলা কোথায় দায়ের করতে হবে?নারীর স্থায়ী ঠিকানা বা বর্তমান বাসস্থানের পারিবারিক আদালতে (Family Court) এই মামলা দায়ের করতে হয়। পারিবারিক আদালত আইন, ১৯৬৫ অনুযায়ী, এই আদালতে ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’, ‘ভরণ-পোষণ’, ও ‘যৌতুক’ সংক্রান্ত মামলা শুনানি হয়। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত কী বলে?খুলা ও নারীর স্বাধীনতা নিয়ে নজির স্থাপনকারী রায়:BLD 2008, Vol-28, Page-332 (High Court Division) এই রায়ে উচ্চ আদালত বলেন—“স্ত্রী যদি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার সুযোগ না দেখেন, তবে স্বামীর সম্মতি ছাড়াও তিনি আদালতের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ চাইতে পারেন। এটি তার মৌলিক অধিকার।”অর্থাৎ, শুধুমাত্র স্বামীর অসম্মতি থাকলে স্ত্রী তালাক পাবে না—এই ধারণা ভুল। আদালত নারীর অভিযোগ, প্রমাণ ও পরিস্থিতি বিবেচনায় বিবাহবিচ্ছেদ অনুমোদন করতে পারেন। বাস্তব গল্প: নার্গিসের মুক্তিনার্গিস এর বিয়ে হয় ১৮ বছর বয়সে। প্রথম কয়েক বছর ভালো গেলেও পরবর্তীতে স্বামী নিয়মিত মারধর করতেন এবং যৌতুকের জন্য চাপ দিতেন। কাবিননামায় ১৮ নম্বর কলাম ফাঁকা থাকায় নিজে তালাক দিতে পারেননি। অবশেষে, তিনি খুলার আবেদন করেন। স্বামী সম্মত না হওয়ায় পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত শুনানি শেষে স্বামীর নির্যাতনের প্রমাণ পেয়ে নার্গিসকে বিচ্ছেদের অনুমতি দেন। এখন তিনি একটি এনজিওতে চাকরি করে নিজের সন্তানকে মানুষ করছেন। তালাকের পর নারীর অধিকারবিবাহবিচ্ছেদের পর নারী নিম্নোক্ত দাবিগুলো তুলতে পারেন: কিছু জরুরি পরামর্শকাবিননামা পড়েই স্বাক্ষর দিন—১৮ নম্বর কলামে আপনার অধিকার নিশ্চিত করুন।আইনি সহায়তা নিন—মহিলা আইন সহায়তা কেন্দ্র, লিগ্যাল এইড, বা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সহায়তা নিন।আইন ও তালাক প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন হোন—বিষয়টি শুধু ধর্মীয় না, আইনি প্রক্রিয়ার সঙ্গেও সম্পর্কিত। উপসংহার: তালাক মানেই পরাজয় নয়, নিজের অধিকার চাওয়া“তালাক” শুনলেই যেন চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসে, নারী যেন একা পড়ে যান—এই সংস্কার বদলাতে হবে। তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদ কোনো অপরাধ নয়, বরং এটি নিজের আত্মসম্মান ও নিরাপত্তা রক্ষার একটি আইনসম্মত উপায়।তাই, ইসলাম এবং বাংলাদেশের আইন—দুই জায়গাতেই নারীদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক ও মানবিক পথ।

মুসলিম নারীর তালাকের অধিকার Read Post »

গ্রেফতারের নিয়ম ও নাগরিক অধিকার: CrPC ধারা ৪৬ ও ৫০ বিশ্লেষণ

গ্রেফতারের নিয়ম ও নাগরিক অধিকার: CrPC ধারা ৪৬ ও ৫০ বিশ্লেষণ

গ্রেফতারের নিয়ম ও নাগরিক অধিকার ভূমিকা বাংলাদেশে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় “গ্রেফতার” একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ গ্রেফতার হন – কখনো অপরাধের প্রেক্ষিতে, আবার কখনো নিছক সন্দেহের বশবর্তী হয়ে। কিন্তু গ্রেফতার মানেই কি ব্যক্তিস্বাধীনতার পরিসমাপ্তি? আমাদের আইনি কাঠামো আদৌ কি একজন সাধারণ নাগরিককে যথাযথ সুরক্ষা দেয়? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর রয়েছে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪৬ ও ৫০, বাংলাদেশের সংবিধানের প্রাসঙ্গিক অনুচ্ছেদ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদে। এই লেখায় আমরা আলোচনা করবো: CrPC ধারা ৪৬: গ্রেফতারের পদ্ধতিঃ CrPC ধারা ৪৬ গ্রেফতার করার পদ্ধতি নির্ধারণ করে দেয়। এটি বলছে: এই ধারা মূলত পুলিশের ‘unfettered’ ক্ষমতার পরিবর্তে একটি নির্ধারিত গাইডলাইন প্রদান করে, যেন গ্রেফতারের সময় অহেতুক বলপ্রয়োগ বা ক্ষমতার অপব্যবহার না হয়। CrPC ধারা ৫০: গ্রেফতারের সময় জানানো বাধ্যতামূলক:এই ধারাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করে: এটি এক ধরনের “information right”,বা তথ্যগত অধিকার, যা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আইনের দৃষ্টিতে নিজেকে রক্ষার প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করে। সংবিধান অনুযায়ী নাগরিক অধিকার: বাংলাদেশের সংবিধান হলো আমাদের মৌলিক অধিকারের মূল উৎস। সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: এছাড়া, সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে: আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের নির্দেশনা বাংলাদেশ ২০০০ সালে আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত চুক্তি (ICCPR) তে স্বাক্ষর করেছে। ICCPR-এর Article 9 অনুযায়ী: এই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড আমাদের অভ্যন্তরীণ আইন এবং বিচারব্যবস্থার দিক নির্দেশক হিসেবে কাজ করে। উচ্চ আদালতের রেফারেন্স ও ব্যাখ্যা ১. BLAST v. Bangladesh (2003) বিষয়: গ্রেফতার ও রিমান্ডে মানবাধিকার লঙ্ঘনবিচারক: বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক এবং বিচারপতি আব্দুল মতিনরেফারেন্স: 55 DLR (HCD) 363মূল রায়: আদালতের নির্দেশনা: গুরুত্ব: এই মামলাটি বাংলাদেশের মানবাধিকার আইনের ইতিহাসে এক মাইলফলক। এটি পুলিশি ক্ষমতার সীমা নির্ধারণ করে এবং সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ব্যক্তির গ্রেপ্তারের সময় তার অধিকার ব্যাখ্যা করে। ২. State vs. Dudu Mia (2005) বিষয়: জামিনযোগ্য অপরাধে পুলিশি হয়রানিরেফারেন্স: 60 DLR (AD) 90মূল রায়: আদালতের পর্যবেক্ষণ: গুরুত্ব: এই রায়ে আদালত পুলিশকে মনে করিয়ে দেয় যে, জামিনযোগ্য অপরাধে হয়রানি নয়, আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা তাদের একান্ত কর্তব্য। ৩. Nur Hossain v. State (2017) বিষয়: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহারসংক্ষিপ্ত প্রেক্ষাপট: নারায়ণগঞ্জের ৭ খুন মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের একজন ছিলেন আলোচিত রাজনীতিবিদ নূর হোসেন এবং কয়েকজন র‌্যাব কর্মকর্তা।রায়: হাইকোর্ট বিভাগ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। আদালতের গুরুত্বপূর্ণ মতামত: গুরুত্ব: এই রায় বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় বড় উদাহরণ, যেখানে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যদের বিচার হয়েছে এবং মানবাধিকারের জয় হয়েছে। পুলিশি কর্তৃত্ব ও নাগরিকের সুরক্ষা পুলিশের কর্তৃত্ব:    নাগরিকের সুরক্ষা: · গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি চাইলে আইনি সহায়তা ও চিকিৎসা সুবিধা দাবি করতে পারেন। নাগরিক হিসেবে করণীয়: গ্রেফতারের সময় কী করবেন? গ্রেফতার একটি সংবেদনশীল প্রক্রিয়া, যা সঠিক নিয়মে করা না হলে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হতে পারে। CrPC ধারা ৪৬ ও ৫০ আমাদের আইনি কাঠামোয় গ্রেফতারের নিয়ম এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইন এই অধিকারগুলিকে আরও সুসংহত করেছে। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আইন জানুন, অধিকার বুঝুন এবং প্রয়োজনে তা প্রয়োগ করতে শিখুন – কারণ অধিকার জানা মানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

গ্রেফতারের নিয়ম ও নাগরিক অধিকার: CrPC ধারা ৪৬ ও ৫০ বিশ্লেষণ Read Post »

চেক ডিজঅনার মামলা: একটি বিস্তারিত আলোচনা (এ টু জেড)

চেক ডিজঅনার মামলা: একটি বিস্তারিত আলোচনা (এ টু জেড)

ব্যবসায়িক লেনদেন এবং ব্যক্তিগত দেনা-পাওনা নিষ্পত্তিতে চেক একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বিশ্বাস এবং আস্থার ভিত্তিতেই চেকের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়। কিন্তু যখন সেই বিশ্বাস ভঙ্গ হয়, অর্থাৎ প্রাপকের হিসাবে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকা বা অন্য কোনো কারণে ব্যাংক কর্তৃক চেক প্রত্যাখ্যাত (Dishonour) হয়, তখন আইনি জটিলতার সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য শক্তিশালী আইন বিদ্যমান, যা মূলত আলোচ্য দলিল আইন, ১৮৮১ (Negotiable Instruments Act, 1881) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।এই লেখায় আমরা বাংলাদেশে চেক ডিজঅনার মামলার আদ্যোপান্ত, অর্থাৎ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাবতীয় আইনি প্রক্রিয়া, সংশ্লিষ্ট ধারা, উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত এবং প্রায়োগিক দিকগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যাতে পাঠক এ বিষয়ে একটি স্বচ্ছ ধারণা লাভ করতে পারেন। চেক কি? নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট আইন ১৮৮১ এর ৬ ধারায় চেকের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সহজ ভাষায়, চেক হলো কোনো নির্দিষ্ট ব্যাংকের উপর কাটা একটি হস্তান্তরযোগ্য দলিল, যেখানে আদেশদানকারী ব্যক্তি (Drawer) ব্যাংককে নির্দেশ দেন যেন চেকে উল্লিখিত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ এর বাহককে (Bearer) বা চেকে উল্লিখিত নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে (Payee) বা তার আদেশানুযায়ী অন্য কোনো ব্যক্তিকে চাহিবামাত্র প্রদান করা হয়। এটি মূলত একটি শর্তহীন আদেশ। চেক ডিজঅনার বা প্রত্যাখ্যান কি? যখন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে টাকা তোলার জন্য চেক উপস্থাপন করে, কিন্তু ব্যাংক নির্দিষ্ট কিছু কারণে সেই চেক অনুযায়ী অর্থ প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন তাকে চেক ডিজঅনার বা প্রত্যাখ্যান বলা হয়। প্রাপ্য হিসাবে অপর্যাপ্ত তহবিল (Insufficient Funds) চেক ডিজঅনারের প্রধান কারণ হলেও আরও বিভিন্ন কারণে চেক প্রত্যাখ্যাত হতে পারে।কোন আইনের অধীনে চেক ডিজঅনারের মামলা হয়?চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত অপরাধ এবং এর বিচার মূলত নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট আইন (Negotiable Instruments Act, 1881) এর ১৩৮ থেকে ১৪১ ধারা অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এর মধ্যে ১৩৮ ধারাটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি চেক ডিজঅনারের অপরাধ, শাস্তি এবং মামলা দায়েরের পদ্ধতি বর্ণনা করে। চেক ডিজঅনারের কারণসমূহ: বিভিন্ন কারণে একটি চেক ব্যাংক কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:অপর্যাপ্ত তহবিল (Insufficient Funds): চেকের হিসাবে উল্লিখিত পরিমাণ অর্থ জমা না থাকা।অঙ্ক এবং কথায় টাকার পরিমাণে গরমিল: চেকের অঙ্কে লেখা টাকার পরিমাণ এবং কথায় লেখা টাকার পরিমাণের মধ্যে অমিল থাকা।স্বাক্ষর অমিল (Signature Mismatch): চেকের উপর প্রদানকারীর স্বাক্ষর ব্যাংকে সংরক্ষিত নমুনা স্বাক্ষরের সাথে না মেলা।বাসি চেক (Stale Cheque): চেকে উল্লিখিত তারিখ থেকে ৬ মাস (বা চেকে উল্লিখিত মেয়াদকাল) অতিক্রান্ত হওয়ার পর চেক উপস্থাপন করা।পোস্ট-ডেটেড চেক (Post-Dated Cheque): চেকে উল্লিখিত তারিখ আসার আগেই উপস্থাপন করা।অ্যাকাউন্ট বন্ধ (Account Closed): যে হিসাবের বিপরীতে চেক ইস্যু করা হয়েছে, সেই হিসাব বন্ধ থাকা।প্রদান স্থগিতের নির্দেশ (Payment Stopped): চেক প্রদানকারী কর্তৃক ব্যাংককে উক্ত চেকের অর্থ প্রদান স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া।চেকে কাটাকাটি বা পরিবর্তন (Alteration/Mutilation): যথাযথ অনুমোদন ছাড়া চেকে কোনো পরিবর্তন বা কাটাকাটি করা হলে।আইনি বাধা (Legal Bar): আদালতের কোনো আদেশ বা অন্য কোনো আইনি কারণে হিসাবটি জব্দ থাকা। ধারা ১৩৮: চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত মূল আইন: নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট আইন ১৮৮১ এর ১৩৮ ধারায় বলা হয়েছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি কোনো ঋণ বা দায় পরিশোধের জন্য কোনো ব্যাংক হিসাব থেকে চেক ইস্যু করেন এবং সেই চেক অপর্যাপ্ত তহবিলের কারণে বা ব্যাংকের সাথে করা চুক্তি অনুযায়ী পরিমাণ অতিক্রম করার কারণে ব্যাংক কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়, তবে উক্ত ব্যক্তি একটি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন।শাস্তি: এই ধারার অধীনে অপরাধ প্রমাণিত হলে, অপরাধী এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা চেকে উল্লিখিত অর্থের তিনগুণ পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।মামলা দায়েরের পূর্বশর্ত (ধারা ১৩৮ এর শর্তাবলী): চেক ডিজঅনার হলেই সরাসরি মামলা করা যায় না। আইন অনুযায়ী কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়:বৈধ মেয়াদের মধ্যে উপস্থাপন: চেকটি ইস্যুর তারিখ থেকে ৬ মাসের মধ্যে (অথবা চেকে উল্লিখিত মেয়াদকালের মধ্যে, যেটি আগে হয়) ব্যাংকে উপস্থাপন করতে হবে।ডিজঅনার সংক্রান্ত তথ্যপ্রাপ্তি: ব্যাংক কর্তৃক চেকটি অপর্যাপ্ত তহবিলের কারণে (বা অন্য বৈধ কারণে যা এই ধারার আওতায় পড়ে) ডিজঅনার হতে হবে এবং ব্যাংক থেকে এই সংক্রান্ত রশিদ (Dishonour Slip/Memo) সংগ্রহ করতে হবে।আইনি নোটিশ প্রেরণ: চেক ডিজঅনার হওয়ার তথ্য জানার ৩০ দিনের মধ্যে চেকের প্রাপক (Payee) বা ধারক (Holder in due course) কর্তৃক চেক প্রদানকারীকে (Drawer) চেকে উল্লিখিত সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধের জন্য लिखित আকারে একটি আইনি নোটিশ প্রদান করতে হবে।প্রেরণ পদ্ধতি: এই নোটিশ সাধারণত রেজিস্ট্রি ডাকযোগে প্রাপ্তি স্বীকারসহ (Registered Post with Acknowledgement Due – AD) প্রেরণ করা হয়। সরাসরি হাতে হাতে দিয়ে প্রাপ্তি স্বীকার সই নেওয়া যেতে পারে, অথবা নির্ভরযোগ্য কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেও পাঠানো যায়, সেক্ষেত্রে প্রাপ্তি স্বীকারের প্রমাণ রাখা আবশ্যক।বিকল্প পদ্ধতি (পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি): যদি চেক প্রদানকারীর সঠিক ঠিকানা জানা না থাকে, তিনি পলাতক হন বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নোটিশ গ্রহণ এড়িয়ে চলেন, সেক্ষেত্রে নোটিশটি একটি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক বাংলা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করেও জারি করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে, পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মূল কপিটি নোটিশ জারির প্রমাণ হিসেবে আদালতে দাখিল করতে হবে। অনেক সময় রেজিস্ট্রি ডাকে নোটিশ প্রেরণের পাশাপাশি অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়।টাকা পরিশোধে ব্যর্থতা: নোটিশ পাওয়ার পর (অথবা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার পর নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী) চেক প্রদানকারী যদি নোটিশে উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে (সাধারণত ৩০ দিন) চেকে উল্লিখিত সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন, তবেই তার বিরুদ্ধে মামলা করার অধিকার জন্মায়।মামলা দায়েরের সময়সীমা: চেক প্রদানকারী কর্তৃক টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে।আইনি নোটিশের গুরুত্ব:চেক ডিজঅনারের মামলা দায়েরের জন্য আইনি নোটিশ প্রেরণ একটি অপরিহার্য পূর্বশর্ত। নোটিশে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো উল্লেখ থাকা আবশ্যক: চেক ডিজঅনার হওয়ার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ (চেক নম্বর, তারিখ, টাকার পরিমাণ, ডিজঅনারের তারিখ ও কারণ)।চেকে উল্লিখিত সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধের জন্য সুস্পষ্ট দাবি। নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে উক্ত টাকা পরিশোধ করার সময়সীমা উল্লেখ। পরিশোধে ব্যর্থ হলে নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট আইন ১৮৮১ এর ১৩৮ ধারার অধীনে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে সুস্পষ্ট হুঁশিয়ারি।সঠিকভাবে নোটিশ প্রেরণ ও এর প্রাপ্তি বা প্রেরণের প্রমাণ (যেমন: রেজিস্ট্রি ডাকের রসিদ ও এডি স্লিপ, অথবা পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির কপি) মামলার জন্য অত্যন্ত জরুরি। কোথায় মামলা দায়ের করতে হবে? (এখতিয়ার – Jurisdiction) নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট আইন ১৮৮১ এর ১৩৮ ধারার অধীনে চেক ডিজঅনারের মামলা একটি ফৌজদারি অপরাধ এবং এটি প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (Court of First Class Magistrate) বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (Metropolitan Magistrate Court) -এ দায়ের করতে হয়।এখতিয়ার মূলত নির্ধারিত হয় যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার ভিত্তিতে। উচ্চ আদালতের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চেক ডিজঅনারের মামলা নিম্নলিখিত যেকোনো একটি স্থানে দায়ের করা যেতে পারে:যে ব্যাংকে চেক উপস্থাপন করা হয়েছিল: অর্থাৎ যে ব্যাংক শাখা চেকটি ডিজঅনার করেছে, সেই শাখাটি যে আদালতের স্থানীয় এখতিয়ারের মধ্যে অবস্থিত।যেখান থেকে আইনি নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছে: নোটিশ প্রদানকারী যে ঠিকানায় বা যে পোস্ট অফিস থেকে নোটিশ প্রেরণ করেছেন, সেই এলাকা যে আদালতের এখতিয়ারভুক্ত। (তবে এই এখতিয়ার নিয়ে ভিন্নমত থাকতে পারে এবং প্রথমোক্ত এখতিয়ারটি বেশি

চেক ডিজঅনার মামলা: একটি বিস্তারিত আলোচনা (এ টু জেড) Read Post »

নারীর অধিকার

নারীর অধিকার, আইন ও বাংলাদেশের বাস্তবতা: একটি সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ নারীর অধিকার বাংলাদেশ

— সংবিধান থেকে শরিয়া: নারীর আইনি সুরক্ষা ও সামাজিক দ্বন্দ্ববাংলাদেশে নারীর অধিকার রক্ষার আইনি কাঠামো বহুমাত্রিক—এখানে ধর্মীয় আইন, আধুনিক সংবিধিবদ্ধ আইন ও সামাজিক প্রথার জটিল সমন্বয় রয়েছে। নারীর নিরাপত্তা, সম্পত্তি, বিবাহ-তালাক, গর্ভপাত থেকে শুরু করে বহুবিবাহ নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে আইনের বিধান ও বাস্তবতার ফারাক বিশাল। এই ব্লগে আমরা নারীর জীবনঘনিষ্ঠ সকল আইন ও তাদের প্রয়োগের চ্যালেঞ্জ নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করব। “আইন শুধু কাগজে নয়, প্রয়োগেই হোক শক্তি— আসুন আমরা করি- নারীর পাশে দাঁড়ানোর দৃঢ় অঙ্গীকার।” ১. সংবিধান ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার: *সংবিধানের  ২অনুচ্ছেদ ৭, ২৮, ও ১৯(৩) এ নারীর সমঅধিকার, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও বিশেষ সুবিধার বিধান রয়েছে।   সিডও সনদ (CEDAW): এটি হলো ‘নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ’। জাতিসংঘের অধীনে ১৯৭৯ সালে এটি গৃহীত হয় এবং ১৯৮১ সাল থেকে কার্যকর হয়। এর মূল লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাপী নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠা করা।  বাংলাদেশ সরকার নারীর অধিকার সুরক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে ১৯৮৪ সালের ৬ নভেম্বর সিডও সনদটি অনুসমর্থন করে। ২. মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ বিবাহ ও তালাক:বিবাহ রেজিস্ট্রেশন (ধারা ৫)  মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্রি বাধ্যতামূলক, কিন্তু ৬৫% বিবাহ অরেজিস্ট্রিকৃত (বিবিএস, ২০২২)। তালাক (ধারা ৭)- স্বামীকে ৯০ দিনের মধ্যে স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে তালাক নোটিশ পাঠাতে হবে।  স্ত্রীও “খুলা” তালাকের আবেদন করতে পারেন, তবে প্রমাণের বোঝা নারীর উপর। বহুবিবাহ (ধারা ৬) মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১-এর অধীনে প্রথম স্ত্রীর লিখিত সম্মতি ও সালিশি পরিষদের অনুমোদন বাধ্যতামূলক।বাস্তবতা: ১২% মুসলিম পুরুষ বহুবিবাহ করেন (ইউনিসেফ, ২০২৩), কিন্তু ৯০% ক্ষেত্রে অনুমোদন ছাড়াই। লঙ্ঘনের শাস্তি: ১ বছর কারাদণ্ড বা ১০,০০০ টাকা জরিমানা, তবে ২০২২ সালে মাত্র ০.৩% মামলায় শাস্তি হয়েছে (আইন কমিশন)। সালিশি পরিষদে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপে অনুমোদন আদায়ের সংস্কৃতি।ভরণপোষণ (ধারা ৯):তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী ৩ মাস ১০ দিন (ইদ্দত) এবং সন্তানদের ভরণপোষণ পাবেন। সমস্যা: আদালতের ডিক্রি থাকা সত্ত্বেও ৬০% নারী ভরণপোষণ পান না (আইন ও সালিশ কেন্দ্র)। উত্তরাধিকার (ইসলামি  আইন): কন্যা পুত্রের অর্ধেক সম্পত্তি পায়, কিন্তু ৭০% ক্ষেত্রে নারী পরিবারের চাপে সম্পত্তি ছাড়েন (মানবাধিকার কমিশন)। ৩. পারিবারিক আইন (অমুসলিম সম্প্রদায়):হিন্দু পারিবারিক আইন:  বিবাহ অরেজিস্ট্রিকৃত, তালাকের কোন বিধান নেই। নারীর সম্পত্তি অধিকার সীমিত (বাবা-স্বামীর সম্পত্তিতে অধিকার নেই)।খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ আইন: বিবাহ-তালাকের জন্য পৃথক বিধি, তবে আধুনিক সংস্কার হচ্ছে। ৪. দণ্ডবিধি, ১৮৬০: নারীর শরীর ও স্বাস্থ্যগর্ভপাত (ধারা ৩১২-৩১৬):ধারা ৩১২: অপরাধমূলক গর্ভপাত করালে ৩ বছর কারাদণ্ড।ব্যতিক্রম: গর্ভপাত বৈধ যদি মায়ের জীবন বাঁচানোর জন্য ডাক্তারি সুপারিশ থাকে।বাস্তবতা: প্রতি বছর ৬ লাখ অনিরাপদ গর্ভপাত (গাটমেকার ইনস্টিটিউট)।“মহিলা ও শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০২৩” গর্ভপাতের নিরাপদ সুযোগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।ধর্ষণ (ধারা ৩৭৫) ( এখন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আই ২০০০ ( সংশোধনী ২০০৩, ২০২০ আইন প্রযোজ্য) ৫. নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩ ও ২০২০)এই আইনটি নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা মোকাবিলায় বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইনি হাতিয়ার।প্রধান বিধানাবলি:অপরাধের তালিকা: ধর্ষণ, গণধর্ষণ ,যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন, অ্যাসিড নিক্ষেপ, অপহরণ, যৌন হয়রানি, পাচার । ২০২০ সংশোধনীতে সাইবার হয়রানি ও শিশু পর্নোগ্রাফি অন্তর্ভুক্ত। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা:– ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড (২০২০ সংশোধনী)।– অ্যাসিড নিক্ষেপে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।– যৌতুকের দাবিতে মৃত্যু ঘটালে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন।বিশেষ প্রক্রিয়া:  ইন ক্যামেরা ট্রায়াল: ভিকটিমের পরিচয় গোপন রেখে বিচার।মামলা দায়েরের সময়সীমা: ঘটনার ৬ মাসের মধ্যে (২০২০ সংশোধনীতে ১ বছর করা হয়েছে)।দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল: মামলা ১৮০ কর্মদিবসে নিষ্পত্তির নির্দেশ।প্রয়োগের চ্যালেঞ্জ: মামলার হার বনাম দণ্ড-  ২০২২ সালে ৮,৩৪৫টি মামলা দায়ের হলেও দণ্ডপ্রাপ্তির হার মাত্র ৩.২% (আইন বিভাগ)।সাক্ষী ভীতি: ৪০% মামলা সাক্ষী না পাওয়ায় খারিজ (মানবাধিকার কমিশন)। ৬. বিশেষ বিবাহ আইন, ১৮৭২ ও বিবাহ রেজিস্ট্রেশন আইন- ১৯৭৪ বিশেষ বিবাহ আইন: যেকোন ধর্মের দুই ব্যক্তির বিবাহ নিবন্ধনের সুযোগ।বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক (২০০৬): অরেজিস্ট্রিকৃত বিবাহে জরিমানা ২৫ হাজার টাকা, কিন্তু প্রয়োগ শূন্যের কাছাকাছি। ৭. সম্পত্তি আইন: নারীর মৌলিক চ্যালেঞ্জ ভূমি অধিকার: State Acquisition and Tenancy Act, ১৯৫০: কৃষিজমিতে নারীর অধিকার স্বীকৃত, কিন্তু মাত্র ১০% নারী জমির মালিক (বিবিএস)। উত্তরাধিকার বিরোধ: ভাই-বোনের বিষয়ে অধিকাংশ সময় সামাজিক চাপে নারীকে সম্পত্তি ছাড়তে বাধ্য করা হয়।পিতামাতার সম্পত্তি:মুসলিম আইন –  কন্যা পুত্রের অর্ধেক পায়।  হিন্দু আইন- অবিবাহিত কন্যার ক্ষেত্রে সীমিত অধিকার। ৮. বহুবিবাহ: আইন বনাম সমাজ মুসলিম পারিবারিক আইন, ১৯৬১: ২য় বিয়ের ক্ষেত্রে প্রথম স্ত্রীর সম্মতি ও সালিশি পরিষদের অনুমোদন লাগে।বাস্তবতা: ৫৮% গ্রামীণ নারী জানেন না স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে অবৈধ (ইউএন উইমেন)। আদালতের মামলার ভয়ে অনুমোদন নেওয়া হয় না, বিয়ে গোপনে হয়। ৯. বাল্যবিবাহ: আইন ও অপব্যবহার বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন, ২০১৭: মেয়ের বয়স ১৮, ছেলের ২১।ধারা ১৯ “বিশেষ পরিস্থিতিতে” ১৬ বছরে বিয়ে বৈধ।পরিসংখ্যান: ২০২৩ সালে ৪৫% বাল্যবিবাহ (মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়)। ৮০% ক্ষেত্রে মেয়ের জন্মসনদ জাল করে বয়স ১৮ দেখানো হয়। ১০. যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮: শাস্তি ও ফাঁকি শাস্তি: যৌতুক নেওয়া-দেওয়ায় ৫ বছর কারাদণ্ড বা ১ লক্ষ টাকা জরিমানা।ফাঁকি: যৌতুককে “উপহার” নামে লেনদেন। বাস্তবতা: ২০২৩ সালে থানায় করা ১,২০০ মামলার মধ্যে ৮০% প্রত্যাহার (পুলিশ সদর দপ্তর)। ১১. পারিবারিক সহিংসতা আইন, ২০১০: সুরক্ষা আদেশের বাস্তবতাসুরক্ষা আদেশ (ধারা ৪): নির্যাতনকারীকে ঘর থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থাসমস্যা: অধিকাংশ নারীর এই আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা।পুলিশি অসহযোগিতা: “পারিবারিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ নয়” এর প্রবণতা। ১২. আধুনিক আইনের সংযোজন সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, ২০২৩–  নারীর ছবি বিকৃতি বা অনলাইন হয়রানিতে ৭ বছর কারাদণ্ড।চ্যালেঞ্জ: ডিজিটাল প্রমাণ সংগ্রহে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অদক্ষতা। [ ১৩. আইনের ফাঁক ও সমাধানের পথ ফাঁক:১. ধর্মীয় ব্যক্তিগত আইন:মুসলিম ও হিন্দু নারীর অধিকার সংকুচিত।২. প্রমাণের বোঝা: ধর্ষণ মামলায় নারীর চরিত্রহননের সংস্কৃতি।৩. জটিল প্রক্রিয়া : সম্পত্তির মামলা ১০-১৫ বছর লাগে। ( ৫ নং ছবি এই প্যারার নিচে বসবে ) সমাধান: ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড: সকল ধর্মের জন্য সমান বিবাহ-উত্তরাধিকার আইন।ফাস্ট-ট্র্যাক কোর্ট: নারী নির্যাতনের মামলা ৬ মাসে নিষ্পত্তি। আইনগত সহায়তা কেন্দ্র (Legal Aid Centers) প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে স্থাপন: গ্রাম বা শহরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরাও সহজেই বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ ও সহায়তা। নারীবান্ধব পুলিশ ডেস্ক ও প্রশিক্ষিত নারী কর্মকর্তার উপস্থিতি: প্রত্যেক থানায় আলাদা নারী সহায়তা ডেস্ক ও নারী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা নিশ্চিত করা আইনগত সচেতনতা কার্যক্রম বাধ্যতামূলক করা (স্কুল, কলেজ কর্মক্ষেত্রে, মসজিদের খুদবায়): নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় আইন (যেমন: পারিবারিক আইন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন)এবং অধিকার বিষয়ক আলোচনা। কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ? বাংলাদেশের নারীরা আইনি কাগজে-কলমে অনেক অধিকার পেয়েছেন, কিন্তু বাস্তবে ধর্মীয় কূপমণ্ডূকতা, প্রশাসনিক জটিলতা ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এখনও প্রধান বাধা। নারীরা যদি সম্পত্তি, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পায়, তবে আইনের প্রয়োগ সহজ হবে। এই যুদ্ধ শুধু আদালতের নয়—প্রতিটি পরিবার, স্কুল ও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। “অধিকার তখনই বাস্তব, যখন সমাজের প্রতিটি কণ্ঠ বলবে—’আমি আছি নারীর পক্ষে‘।”

নারীর অধিকার, আইন ও বাংলাদেশের বাস্তবতা: একটি সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ নারীর অধিকার বাংলাদেশ Read Post »

যৌতুক নিরোধ আইন

বাংলাদেশের যৌতুক নিরোধ আইন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের যৌতুক এর জন্য নির্যাতন সম্পর্কিত ধারার বিশ্লেষন

যৌতুক – ছোট্ট একটি শব্দ, কিন্তু এর পেছনে লুকিয়ে আছে হাজারো নারীর কান্না, অপমান আর নির্যাতনের গল্প। আমাদের সমাজে ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে থাকা এই প্রথাটি কেড়ে নিচ্ছে বহু নারীর মুখের হাসি, এমনকি জীবনও। তবে আশার কথা হলো, এই অন্যায় রুখতে আমাদের দেশেই রয়েছে শক্তিশালী আইন। যৌতুকের অভিশাপ থেকে নারীদের সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশ সরকার দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন করেছে। আসুন, এই আইনগুলো সম্পর্কে সহজভাবে জেনে নিই এবং আমাদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হই। যৌতুক চাইলেই অপরাধ: যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ (ধারা ৩)শুধু যৌতুক দেওয়া-নেওয়া নয়, যৌতুক দাবি করাও একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ নম্বর ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে: অপরাধ: যদি কেউ বিয়েতে বা বিয়ের পরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে (সরাসরি চেয়ে বা ইশারায়/চাপ দিয়ে) যৌতুক দাবি করেন। শাস্তি: সর্বনিম্ন ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। সহজ কথায়: কেউ যদি আপনার কাছে বা আপনার পরিবারের কাছে বিয়ের শর্ত হিসেবে বা বিয়ের পরে টাকা, আসবাব, গাড়ি বা অন্য কিছু চায়, সেটাই যৌতুক দাবি এবং আইনের চোখে অপরাধ। যৌতুকের জন্য নির্যাতন? নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (ধারা ১১) যৌতুকের দাবি যদি গড়ায় শারীরিক নির্যাতনে, তাহলে তা আরও গুরুতর অপরাধ। এই ধরনের অপরাধের বিচারের জন্য রয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০( সংশোধনী ২০০৩ ) এ। এই আইনের ১১ নম্বর ধারায় যৌতুকের জন্য নির্যাতনের বিভিন্ন শাস্তির কথা বলা আছে। বিশেষ করে ধারা ১১(গ) অনুযায়ী: (গুরুতর জখম বা মৃত্যুর ক্ষেত্রে এই আইনের ১১(ক)(খ) ধারায় আরও কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে, যার মধ্যে যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।) মূল কথা: যৌতুকের জন্য গায়ে হাত তোলা বা যেকোনো ধরনের শারীরিক নির্যাতন মারাত্মক অপরাধ এবং এর জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা আছে। কোন আইনে কী পার্থক্য? এক নজরে বৈশিষ্ট্য যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮ (ধারা ৩) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (ধারা ১১/গ) মূল অপরাধ শুধু যৌতুক দাবি করা যৌতুকের জন্য মারধর/নির্যাতন করা শাস্তি (জেল) ১ থেকে ৫ বছর ২থেকে ৫ বছর (সশ্রম) শাস্তি (জরিমানা) সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা জেলের সাথে অতিরিক্ত জরিমানা জামিন জামিন যোগ্য নয়, তবে জামিন পাওয়া যায় জামিনযোগ্য নয় আপোষ করা যায় আপোষযোগ্য নয় বিচার কোথায় হয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল কোথায়, কিভাবে এবং কোন আইনে মামলা করবেন? আইনি সুরক্ষা পেতে হলে, ঠিক কী ঘটেছে তার ওপর ভিত্তি করে সঠিক আইন বাছাই করতে হবে এবং সঠিক জায়গায় অভিযোগ জানাতে হবে। আসুন দেখি কখন, কোথায় এবং কোন আইনের সাহায্য নেবেন: পরিস্থিতি ১: শুধু যৌতুক দাবি করা হয়েছে (কোনো মারধর বা নির্যাতন হয়নি)   :    কোন আইন প্রযোজ্য? যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ (ধারা ৩)। কারণ এখানে মূল অপরাধ হলো যৌতুক “দাবি” করা। কোথায় ও কিভাবে অভিযোগ করবেন?   বিকল্প ১: আপনার নিকটস্থ থানায় গিয়ে লিখিত এজাহার (FIR) দাখিল করতে পারেন। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করবে। বিকল্প ২: আপনি সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (প্রথম শ্রেণীর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট) নালিশি মামলা দায়ের করতে পারেন। এতে পুলিশের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। পরিস্থিতি ২: যৌতুকের জন্য মারধর, শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে: কোন আইন প্রযোজ্য? নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (ধারা ১১)। কারণ এখানে দাবির পাশাপাশি “নির্যাতন” বা “জখম” ঘটানো হয়েছে। (সাধারণ মারধরের জন্য ধারা ১১(গ), প্রযোজ্য)।  কোথায় ও কিভাবে অভিযোগ করবেন? বিকল্প ১: যত দ্রুত সম্ভব থানায় গিয়ে বিস্তারিত জানিয়ে এজাহার (FIR) দায়ের করুন। পুলিশ তদন্ত করে মামলাটি বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠাবে। (নির্যাতনের শিকার হলে দ্রুত ডাক্তারি পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি)। বিকল্প ২: আপনি চাইলে থানার মাধ্যমে না গিয়ে, সরাসরি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন (এই আইনের ২৭ ধারা অনুযায়ী)। এক্ষেত্রে নির্যাতনের সপক্ষে প্রমাণ (যেমন ডাক্তারের সার্টিফিকেট, ঘটনার সাক্ষী) আদালতে উপস্থাপন করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ টিপস  ১ যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা – দাবির রেকর্ড (অডিও/ভিডিও/লিখিত) থাকলে মামলা শক্তিশালী হয়। -মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।২।. ধারা ১১/গ এ মামলা (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ )– নির্যাতনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে মেডিকেল পরীক্ষা করান। থানার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা এনজিওর সহায়তা নিন।– বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ আইন থাকলেও যৌতুকের অভিশাপ সমাজ থেকে পুরোপুরি মুছে যায়নি। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর (যেমন আইন ও সালিশ কেন্দ্র – ASK, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ) তথ্যমতে, যৌতুকের জন্য সহিংসতা এখনও ঘটে চলেছে। এর পেছনের কিছু কারণ:                          সামাজিক লজ্জা: অনেকে সম্মানহানির ভয়ে বা পরিবারের চাপে অভিযোগ করতে চান না।   – ৬৭% ক্ষেত্রে পরিবার মামলা করতে চায় না (সোশ্যাল স্টিগমা) প্রমাণের সমস্যা: বিশেষ করে শুধু দাবির ক্ষেত্রে বা পরোক্ষ চাপের ক্ষেত্রে প্রমাণ জোগাড় করা কঠিন হয়। ৪০% মামলা প্রমাণের অভাবে খারিজ হয়                                                                                                              দীর্ঘসূত্রিতা: বিচার পেতে অনেক সময় লেগে যায়। গড়ে ১,৪২০ দিন লাগে একটি মামলা নিষ্পত্তিতে। আসুন, রুখে দাঁড়াই যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি। শুধু আইন দিয়ে একে নির্মূল করা কঠিন। প্রয়োজন আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। মনে রাখবেন, আপনার নীরবতা অপরাধীকে আরও সাহস যোগায়। যৌতুকের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন, একটি সুন্দর ও নিরাপদ সমাজ গড়তে সাহায্য করুন। তথ্যসূত্র: ১। যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ ২। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধনী সহ) ৩।ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ ৪। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (ASK), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদন।

বাংলাদেশের যৌতুক নিরোধ আইন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের যৌতুক এর জন্য নির্যাতন সম্পর্কিত ধারার বিশ্লেষন Read Post »

বাংলাদেশে প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা, আইন, ঐতিহ্য, অধিকার

বাংলাদেশে প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা আইনের শ্লথ গতি ও সমাজের নিষ্ঠুর চেহারা।

বাংলাদেশে প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা কোনো নতুন ঘটনা নয়। রাস্তার কুকুরকে পিটিয়ে মারা, বিড়ালছানাকে বিষ খাওয়ানো, গরুকে অনাহারে রেখে হাড়জিরজির করে তোলা—এসব দৃশ্য আমাদের চোখে এতটাই স্বাভাবিক যে, তা দেখেও আমরা আর চোখ ফেরাই না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই নিষ্ঠুরতা কি আমাদেরই সমাজের অসহিষ্ণুতা ও নৈতিক অধঃপতনের প্রতিচ্ছবি নয়?২০১৯ সালে প্রণীত প্রাণী কল্যাণ আইন আশার আলো দেখালেও, বাস্তবে এর প্রয়োগ প্রায় শূন্যের কোঠায়। আইন আছে, শাস্তির বিধান আছে, কিন্তু নেই কার্যকর প্রয়োগ। প্রাণীদের আর্তনাদ যেন আইনের ফাঁক গলে হারিয়ে যায়। আজকে আমরা দেখবো, বাংলাদেশে প্রাণীদের বর্তমান অবস্থা, প্রাণী কল্যাণ আইন পাস হওয়ার পর থেকে কত মামলা হয়েছে, কতজন শাস্তি পেয়েছে এবং কেন এই আইন কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রাণীদের বর্তমান অবস্থা: একটি করুণ চিত্র বাংলাদেশে প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা -র ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। কিছু পরিসংখ্যান ও উদাহরণ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে, আমরা কতটা পশুত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি: ১. রাস্তার কুকুর ও বিড়ালদের ওপর নির্যাতনপ্রতি বছর ৫০,০০০+ রাস্তার কুকুর বিষপ্রয়োগ, পিটিয়ে বা গাড়ি চাপায় মারা হয় (সূত্র: অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন)।ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কিছু কর্মী -অবৈধভাবে কুকুর হত্যা করে, যদিও আইনে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জে একটি কুকুরকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ভিডিও ভাইরাল হয়, কিন্তু অপরাধী আজও ধরাছোঁয়ার বাইরে। ২. গৃহপালিত প্রাণীদের অবহেলা– গরু, ছাগল ও অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণীকে অনাহারে, রোদে-বৃষ্টিতে বেঁধে রাখা হয়।অনেক গরুকে অতিরিক্ত কাজ করিয়ে পঙ্গু বানানো হয়, কিন্তু মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ২০২৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৮% গৃহপালিত প্রাণী পর্যাপ্ত খাবার পায় না (ব্লু প্ল্যানেট রিপোর্ট)।৩. বন্য প্রাণীদের ওপর অত্যাচার-সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটন মৌসুম শেষ হলে বহু কুকুরকে ফেলে রাখা হয়, যারা অনাহারে মারা যায়।বন থেকে ধরা পড়া বানর, গন্ধগোকুল বা অন্যান্য বন্যপ্রাণীকে – বাজারে বিক্রি বা পিটিয়ে মারা হয়**। ২। প্রাণী কল্যাণ আইন, ২০১৯: আশা ও হতাশা২০১৯ সালে **প্রাণী কল্যাণ আইন** পাস হওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন, এখন প্রাণীদের নির্যাতন বন্ধ হবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। আইনের মূল ধারা ও শাস্তি ১. বিষপ্রয়োগে হত্যার শাস্তি (ধারা ৪(২): কোনো প্রাণীকে বিষ বা অন্য কোনো নৃশংস পদ্ধতিতে হত্যা করলে, দণ্ডবিধির ৪২৮ ও ৪২৯ ধারা অনুযায়ী শাস্তি- ২ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ড২. সাধারণ নিষ্ঠুরতার শাস্তি (ধারা ৪(১) প্রাণীকে অকারণে আঘাত করা, ক্ষতি করা বা যন্ত্রণা দেওয়া- ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ১০,০০০ টাকা জরিমানাদ্বিতীয়বার অপরাধ করলে শাস্তি দ্বিগুণ৩. অবহেলা ও উপেক্ষার শাস্তি (ধারা ৫): প্রাণীর প্রয়োজনীয় খাদ্য, পানি, আশ্রয় না দেওয়া, অসুস্থ প্রাণীর চিকিৎসা না করানো, ৩ মাস কারাদণ্ড বা ৫,০০০ টাকা জরিমানা। আইন পাসের পর কত মামলা হয়েছে? ২০২০-২০২৩ পর্যন্ত মোট ১৫৭টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে (সূত্র: বাংলাদেশ পুলিশ)।এর মধ্যে মাত্র ২৩টি মামলার চূড়ান্ত রায় হয়েছে। বাকি মামলাগুলো -অনুসন্ধান বা বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। প্রানী কল্যান আইন ২০১৯ হওয়ার পর মামলা ও শাস্তির পরিসংখ্যান (২০২০–২০২৪) বছর মামলা শাস্তি বিচারাধীন ২০২০ ২২টি ০৩ জন ১৯ টি ২০২১ ৩৫টি ০৫ জন ৩০টি ২০২২ ৪৮টি ০৭ জন ৪১টি ২০২৩ ৫২ টি ০৮ জন ৪৪ টি সূত্র: বাংলাদেশ পুলিশ ও অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ৩। কেন এই আইন কার্যকর হচ্ছে নাঃ ১.পুলিশের অসচেতনতা: ৭০% থানায় এই আইন সম্পর্কে ধারণা নেই (AWF সার্ভে, ২০২৩) মামলা নিতে অনীহা দেখা যায়, কারণ প্রাণী নির্যাতনকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।২. পমাণ সংগ্রহে সমস্যা: নির্যাতনের ভিডিও বা সাক্ষী না থাকলে মামলা টেকে না। অনেক সময় **স্থানীয় প্রভাবশালীরা চাপ প্রয়োগ করে মামলা তুলে নেয়।৩. মামলা নিষ্পত্তির ধীর গতি: একটি মামলার নিষ্পত্তি হতে ২-৪ বছর লেগে যায়। ভুক্তভোগী (প্রাণী) আদালতে উপস্থিত হতে পারে না, তাই মামলা দুর্বল হয়ে পড়ে।।৪. সামাজিক স্বীকৃতির অভাব: সমাজের অনেকেই মনে করেন, “প্রাণীর জন্য এত ঝামেলা কেন?”  প্রাণী অধিকার কর্মীদের হেয়প্রতিপন্ন করা হয়।  উল্লেখযোগ্য মামলা ও কেস স্টাডি ১. ২০২১: ঢাকায় কুকুরের উপর অ্যাসিড নিক্ষেপঃ একটি রাস্তার কুকুরের উপর অ্যাসিড ছুড়ে মারার ঘটনায় মামলা হয়। অপরাধী ২ বছর পর শাস্তি পায় (প্রথমবারের মতো এই আইনে শাস্তি)।২. ২০২২: সাভারে গরু পিটিয়ে হত্যাঃ একটি গরুকে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ভাইরাল হলে মামলা হয়। মালিক জরিমানা ও ৬ মাস কারাদণ্ড পান ।৩. ২০২৩: কক্সবাজারে বানর পিটিয়ে মারাঃ  একটি বানরকে পর্যটকরা পিটিয়ে মারলে স্থানীয়রা মামলা করে। মামলাটি এখনও বিচারাধীন। ৪। কীভাবে এই অবস্থা বদলানো সম্ভবঃ ১. আইনের কঠোর প্রয়োগঃ পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রাণী কল্যাণ আইন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রতিটি থানায় প্রাণী নির্যাতন বিষয়ক বিশেষ সেল গঠন করা উচিত।২. প্রমাণ সংগ্রহে সহায়তাঃ নির্যাতনের ভিডিও বা ছবি থাকলে মামলা শক্তিশালী হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায় (যেমন: ২০২৩ সালে খুলনায় একটি কুকুরকে পিটিয়ে মারার ভিডিও ভাইরাল হলে দোষীকে আটক করা হয়)।৩. সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোঃ  স্কুল-কলেজে প্রাণী অধিকার বিষয়ক কর্মশালা করা যেতে পারে। মসজিদ, মন্দির ও গণমাধ্যমে  প্রাণীদের প্রতি দয়াশীল হওয়ার বার্তা প্রচার করতে হবে। ৪. প্রাণী কল্যাণ সংগঠনগুলোর শক্তিশালীকরণ অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, ব্লু প্ল্যানেট. প ফাউন্ডেশন  ইত্যাদি সংগঠনগুলোকে সরকারি সহায়তা দেওয়া উচিত। একটি জাতীয় প্রাণী হেল্পলাইন নম্বর চালু করা দরকার। আমরা কি নিষ্ঠুর হয়ে উঠছিঃএকটি দেশের নৈতিক অবস্থান বোঝা যায় সেখানকার প্রাণীদের প্রতি মানুষের আচরণ দেখে। বাংলাদেশে প্রাণী নির্যাতনের ঘটনাগুলো শুধু আইনের ব্যর্থতা নয়, এটি আমাদের সামষ্টিক নৈতিক অবক্ষয়েরপরিচয়। “প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা কোনো সভ্য সমাজের পরিচয় হতে পারে না।”- মহাত্মা গান্ধীআইন আছে, কিন্তু আইনের প্রয়োগ নেই মানুষ সচেতন, কিন্তু কণ্ঠস্বর নেই। আমরা কুকুর-বিড়ালের যন্ত্রণায় কান ঢেকে দিই, কারণ “এগুলো তো শুধু প্রাণী“। কিন্তু ভুলে যাই, যে সমাজ প্রাণীর কষ্টকে উপেক্ষা করে, সে সমাজ একদিন মানুষের কষ্টকেও উপেক্ষা করবে। Leonardo da Vinci বলেছেন- যে দিন মানুষ প্রানীদের হত্যা করা বন্ধ করবে, সেদিন মানুষও একে অপরকে হত্যা করা বন্ধ করবে। আসুন, প্রাণীদের প্রতি সহমর্মিতা দেখাই। প্রানীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্ধ করুন একটি কুকুরকে খাবার দিন, একটি বিড়ালকে রাস্তা পার করে দিন, একটি গরুকে পানি পান করতে সাহায্য করুন। ক্ষুদ্র এই ভালোবাসাই আমাদের মানুষ করে তোলে। রেফারেন্স১. প্রাণী কল্যাণ আইন, ২০১৯ – বাংলাদেশ গেজেট।২. অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন (AWF) – প্রাণী নির্যাতন রিপোর্ট (২০২৩)।৩. বাংলাদেশ পুলিশ – মামলা সংক্রান্ত ডেটা (২০২৪)।৪. ব্লু প্ল্যানেট – গৃহপালিত প্রাণী গবেষণা (২০২৩)।৫. প্রথম আলো – ঢাকায় কুকুর অ্যাসিড নিক্ষেপ কেস (২০২১)।  

বাংলাদেশে প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা আইনের শ্লথ গতি ও সমাজের নিষ্ঠুর চেহারা। Read Post »

আমাদের সকল আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

You have been successfully Subscribed! Ops! Something went wrong, please try again.

আইন, অধিকার ও আইনী পরামর্শ।

আমাদের সম্পর্কে

কপিরাইট নোটিস

ট্রেড লাইসেন্স নংঃ ২৪০০৮৮২৫০১৯০০৭৩৮৯

ডিবিআইডি: ২৮৮৬৬৬৪৬০

গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক

যোগাযোগ করুন

আমাদের ফলো করুন:

আইনকথন.কম © ২০২৫
0
    0
    Your Cart
    Your cart is emptyReturn to Home
    Scroll to Top