ainkhathon@gmail.com
Edit Template

Author name: seo

নারীর অধিকার

নারীর অধিকার, আইন ও বাংলাদেশের বাস্তবতা: একটি সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ নারীর অধিকার বাংলাদেশ

— সংবিধান থেকে শরিয়া: নারীর আইনি সুরক্ষা ও সামাজিক দ্বন্দ্ববাংলাদেশে নারীর অধিকার রক্ষার আইনি কাঠামো বহুমাত্রিক—এখানে ধর্মীয় আইন, আধুনিক সংবিধিবদ্ধ আইন ও সামাজিক প্রথার জটিল সমন্বয় রয়েছে। নারীর নিরাপত্তা, সম্পত্তি, বিবাহ-তালাক, গর্ভপাত থেকে শুরু করে বহুবিবাহ নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে আইনের বিধান ও বাস্তবতার ফারাক বিশাল। এই ব্লগে আমরা নারীর জীবনঘনিষ্ঠ সকল আইন ও তাদের প্রয়োগের চ্যালেঞ্জ নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করব। “আইন শুধু কাগজে নয়, প্রয়োগেই হোক শক্তি— আসুন আমরা করি- নারীর পাশে দাঁড়ানোর দৃঢ় অঙ্গীকার।” ১. সংবিধান ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার: *সংবিধানের  ২অনুচ্ছেদ ৭, ২৮, ও ১৯(৩) এ নারীর সমঅধিকার, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও বিশেষ সুবিধার বিধান রয়েছে।   সিডও সনদ (CEDAW): এটি হলো ‘নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ’। জাতিসংঘের অধীনে ১৯৭৯ সালে এটি গৃহীত হয় এবং ১৯৮১ সাল থেকে কার্যকর হয়। এর মূল লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাপী নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠা করা।  বাংলাদেশ সরকার নারীর অধিকার সুরক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে ১৯৮৪ সালের ৬ নভেম্বর সিডও সনদটি অনুসমর্থন করে। ২. মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ বিবাহ ও তালাক:বিবাহ রেজিস্ট্রেশন (ধারা ৫)  মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্রি বাধ্যতামূলক, কিন্তু ৬৫% বিবাহ অরেজিস্ট্রিকৃত (বিবিএস, ২০২২)। তালাক (ধারা ৭)- স্বামীকে ৯০ দিনের মধ্যে স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে তালাক নোটিশ পাঠাতে হবে।  স্ত্রীও “খুলা” তালাকের আবেদন করতে পারেন, তবে প্রমাণের বোঝা নারীর উপর। বহুবিবাহ (ধারা ৬) মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১-এর অধীনে প্রথম স্ত্রীর লিখিত সম্মতি ও সালিশি পরিষদের অনুমোদন বাধ্যতামূলক।বাস্তবতা: ১২% মুসলিম পুরুষ বহুবিবাহ করেন (ইউনিসেফ, ২০২৩), কিন্তু ৯০% ক্ষেত্রে অনুমোদন ছাড়াই। লঙ্ঘনের শাস্তি: ১ বছর কারাদণ্ড বা ১০,০০০ টাকা জরিমানা, তবে ২০২২ সালে মাত্র ০.৩% মামলায় শাস্তি হয়েছে (আইন কমিশন)। সালিশি পরিষদে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপে অনুমোদন আদায়ের সংস্কৃতি।ভরণপোষণ (ধারা ৯):তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী ৩ মাস ১০ দিন (ইদ্দত) এবং সন্তানদের ভরণপোষণ পাবেন। সমস্যা: আদালতের ডিক্রি থাকা সত্ত্বেও ৬০% নারী ভরণপোষণ পান না (আইন ও সালিশ কেন্দ্র)। উত্তরাধিকার (ইসলামি  আইন): কন্যা পুত্রের অর্ধেক সম্পত্তি পায়, কিন্তু ৭০% ক্ষেত্রে নারী পরিবারের চাপে সম্পত্তি ছাড়েন (মানবাধিকার কমিশন)। ৩. পারিবারিক আইন (অমুসলিম সম্প্রদায়):হিন্দু পারিবারিক আইন:  বিবাহ অরেজিস্ট্রিকৃত, তালাকের কোন বিধান নেই। নারীর সম্পত্তি অধিকার সীমিত (বাবা-স্বামীর সম্পত্তিতে অধিকার নেই)।খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ আইন: বিবাহ-তালাকের জন্য পৃথক বিধি, তবে আধুনিক সংস্কার হচ্ছে। ৪. দণ্ডবিধি, ১৮৬০: নারীর শরীর ও স্বাস্থ্যগর্ভপাত (ধারা ৩১২-৩১৬):ধারা ৩১২: অপরাধমূলক গর্ভপাত করালে ৩ বছর কারাদণ্ড।ব্যতিক্রম: গর্ভপাত বৈধ যদি মায়ের জীবন বাঁচানোর জন্য ডাক্তারি সুপারিশ থাকে।বাস্তবতা: প্রতি বছর ৬ লাখ অনিরাপদ গর্ভপাত (গাটমেকার ইনস্টিটিউট)।“মহিলা ও শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০২৩” গর্ভপাতের নিরাপদ সুযোগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।ধর্ষণ (ধারা ৩৭৫) ( এখন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আই ২০০০ ( সংশোধনী ২০০৩, ২০২০ আইন প্রযোজ্য) ৫. নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩ ও ২০২০)এই আইনটি নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা মোকাবিলায় বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইনি হাতিয়ার।প্রধান বিধানাবলি:অপরাধের তালিকা: ধর্ষণ, গণধর্ষণ ,যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন, অ্যাসিড নিক্ষেপ, অপহরণ, যৌন হয়রানি, পাচার । ২০২০ সংশোধনীতে সাইবার হয়রানি ও শিশু পর্নোগ্রাফি অন্তর্ভুক্ত।শাস্তিমূলক ব্যবস্থা:– ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড (২০২০ সংশোধনী)।– অ্যাসিড নিক্ষেপে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।– যৌতুকের দাবিতে মৃত্যু ঘটালে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন।বিশেষ প্রক্রিয়া:  ইন ক্যামেরা ট্রায়াল: ভিকটিমের পরিচয় গোপন রেখে বিচার।মামলা দায়েরের সময়সীমা: ঘটনার ৬ মাসের মধ্যে (২০২০ সংশোধনীতে ১ বছর করা হয়েছে)।দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল: মামলা ১৮০ কর্মদিবসে নিষ্পত্তির নির্দেশ।প্রয়োগের চ্যালেঞ্জ: মামলার হার বনাম দণ্ড-  ২০২২ সালে ৮,৩৪৫টি মামলা দায়ের হলেও দণ্ডপ্রাপ্তির হার মাত্র ৩.২% (আইন বিভাগ)।সাক্ষী ভীতি: ৪০% মামলা সাক্ষী না পাওয়ায় খারিজ (মানবাধিকার কমিশন)। ৬. বিশেষ বিবাহ আইন, ১৮৭২ ও বিবাহ রেজিস্ট্রেশন আইন- ১৯৭৪ বিশেষ বিবাহ আইন: যেকোন ধর্মের দুই ব্যক্তির বিবাহ নিবন্ধনের সুযোগ।বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক (২০০৬): অরেজিস্ট্রিকৃত বিবাহে জরিমানা ২৫ হাজার টাকা, কিন্তু প্রয়োগ শূন্যের কাছাকাছি। ৭. সম্পত্তি আইন: নারীর মৌলিক চ্যালেঞ্জ ভূমি অধিকার: State Acquisition and Tenancy Act, ১৯৫০: কৃষিজমিতে নারীর অধিকার স্বীকৃত, কিন্তু মাত্র ১০% নারী জমির মালিক (বিবিএস)। উত্তরাধিকার বিরোধ: ভাই-বোনের বিষয়ে অধিকাংশ সময় সামাজিক চাপে নারীকে সম্পত্তি ছাড়তে বাধ্য করা হয়।পিতামাতার সম্পত্তি:মুসলিম আইন –  কন্যা পুত্রের অর্ধেক পায়।  হিন্দু আইন- অবিবাহিত কন্যার ক্ষেত্রে সীমিত অধিকার। ৮. বহুবিবাহ: আইন বনাম সমাজ মুসলিম পারিবারিক আইন, ১৯৬১: ২য় বিয়ের ক্ষেত্রে প্রথম স্ত্রীর সম্মতি ও সালিশি পরিষদের অনুমোদন লাগে।বাস্তবতা: ৫৮% গ্রামীণ নারী জানেন না স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে অবৈধ (ইউএন উইমেন)। আদালতের মামলার ভয়ে অনুমোদন নেওয়া হয় না, বিয়ে গোপনে হয়। ৯. বাল্যবিবাহ: আইন ও অপব্যবহার বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন, ২০১৭: মেয়ের বয়স ১৮, ছেলের ২১।ধারা ১৯ “বিশেষ পরিস্থিতিতে” ১৬ বছরে বিয়ে বৈধ।পরিসংখ্যান: ২০২৩ সালে ৪৫% বাল্যবিবাহ (মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়)। ৮০% ক্ষেত্রে মেয়ের জন্মসনদ জাল করে বয়স ১৮ দেখানো হয়। ১০. যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮: শাস্তি ও ফাঁকি শাস্তি: যৌতুক নেওয়া-দেওয়ায় ৫ বছর কারাদণ্ড বা ১ লক্ষ টাকা জরিমানা।ফাঁকি: যৌতুককে “উপহার” নামে লেনদেন। বাস্তবতা: ২০২৩ সালে থানায় করা ১,২০০ মামলার মধ্যে ৮০% প্রত্যাহার (পুলিশ সদর দপ্তর)। ১১. পারিবারিক সহিংসতা আইন, ২০১০: সুরক্ষা আদেশের বাস্তবতাসুরক্ষা আদেশ (ধারা ৪): নির্যাতনকারীকে ঘর থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থাসমস্যা: অধিকাংশ নারীর এই আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা।পুলিশি অসহযোগিতা: “পারিবারিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ নয়” এর প্রবণতা। ১২. আধুনিক আইনের সংযোজন সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, ২০২৩–  নারীর ছবি বিকৃতি বা অনলাইন হয়রানিতে ৭ বছর কারাদণ্ড।চ্যালেঞ্জ: ডিজিটাল প্রমাণ সংগ্রহে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অদক্ষতা। [ ১৩. আইনের ফাঁক ও সমাধানের পথ ফাঁক:১. ধর্মীয় ব্যক্তিগত আইন:মুসলিম ও হিন্দু নারীর অধিকার সংকুচিত।২. প্রমাণের বোঝা: ধর্ষণ মামলায় নারীর চরিত্রহননের সংস্কৃতি।৩. জটিল প্রক্রিয়া : সম্পত্তির মামলা ১০-১৫ বছর লাগে। ( ৫ নং ছবি এই প্যারার নিচে বসবে ) সমাধান: ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড: সকল ধর্মের জন্য সমান বিবাহ-উত্তরাধিকার আইন।ফাস্ট-ট্র্যাক কোর্ট: নারী নির্যাতনের মামলা ৬ মাসে নিষ্পত্তি। আইনগত সহায়তা কেন্দ্র (Legal Aid Centers) প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে স্থাপন: গ্রাম বা শহরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরাও সহজেই বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ ও সহায়তা। নারীবান্ধব পুলিশ ডেস্ক ও প্রশিক্ষিত নারী কর্মকর্তার উপস্থিতি: প্রত্যেক থানায় আলাদা নারী সহায়তা ডেস্ক ও নারী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা নিশ্চিত করা আইনগত সচেতনতা কার্যক্রম বাধ্যতামূলক করা (স্কুল, কলেজ কর্মক্ষেত্রে, মসজিদের খুদবায়): নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় আইন (যেমন: পারিবারিক আইন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন)এবং অধিকার বিষয়ক আলোচনা। কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ? বাংলাদেশের নারীরা আইনি কাগজে-কলমে অনেক অধিকার পেয়েছেন, কিন্তু বাস্তবে ধর্মীয় কূপমণ্ডূকতা, প্রশাসনিক জটিলতা ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এখনও প্রধান বাধা। নারীরা যদি সম্পত্তি, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পায়, তবে আইনের প্রয়োগ সহজ হবে। এই যুদ্ধ শুধু আদালতের নয়—প্রতিটি পরিবার, স্কুল ও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। “অধিকার তখনই বাস্তব, যখন সমাজের প্রতিটি কণ্ঠ বলবে—’আমি আছি নারীর পক্ষে‘।”

নারীর অধিকার, আইন ও বাংলাদেশের বাস্তবতা: একটি সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ নারীর অধিকার বাংলাদেশ Read Post »

বাংলাদেশের যৌতুক নিরোধ আইন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের যৌতুক এর জন্য নির্যাতন সম্পর্কিত ধারার বিশ্লেষন

যৌতুক – ছোট্ট একটি শব্দ, কিন্তু এর পেছনে লুকিয়ে আছে হাজারো নারীর কান্না, অপমান আর নির্যাতনের গল্প। আমাদের সমাজে ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে থাকা এই প্রথাটি কেড়ে নিচ্ছে বহু নারীর মুখের হাসি, এমনকি জীবনও। তবে আশার কথা হলো, এই অন্যায় রুখতে আমাদের দেশেই রয়েছে শক্তিশালী আইন। যৌতুকের অভিশাপ থেকে নারীদের সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশ সরকার দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন করেছে। আসুন, এই আইনগুলো সম্পর্কে সহজভাবে জেনে নিই এবং আমাদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হই। যৌতুক চাইলেই অপরাধ: যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ (ধারা ৩)শুধু যৌতুক দেওয়া-নেওয়া নয়, যৌতুক দাবি করাও একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ নম্বর ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে: অপরাধ: যদি কেউ বিয়েতে বা বিয়ের পরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে (সরাসরি চেয়ে বা ইশারায়/চাপ দিয়ে) যৌতুক দাবি করেন। শাস্তি: সর্বনিম্ন ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। সহজ কথায়: কেউ যদি আপনার কাছে বা আপনার পরিবারের কাছে বিয়ের শর্ত হিসেবে বা বিয়ের পরে টাকা, আসবাব, গাড়ি বা অন্য কিছু চায়, সেটাই যৌতুক দাবি এবং আইনের চোখে অপরাধ। যৌতুকের জন্য নির্যাতন? নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (ধারা ১১) যৌতুকের দাবি যদি গড়ায় শারীরিক নির্যাতনে, তাহলে তা আরও গুরুতর অপরাধ। এই ধরনের অপরাধের বিচারের জন্য রয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০( সংশোধনী ২০০৩ ) এ। এই আইনের ১১ নম্বর ধারায় যৌতুকের জন্য নির্যাতনের বিভিন্ন শাস্তির কথা বলা আছে। বিশেষ করে ধারা ১১(গ) অনুযায়ী: (গুরুতর জখম বা মৃত্যুর ক্ষেত্রে এই আইনের ১১(ক)(খ) ধারায় আরও কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে, যার মধ্যে যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।) মূল কথা: যৌতুকের জন্য গায়ে হাত তোলা বা যেকোনো ধরনের শারীরিক নির্যাতন মারাত্মক অপরাধ এবং এর জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা আছে। কোন আইনে কী পার্থক্য? এক নজরে বৈশিষ্ট্য যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮ (ধারা ৩) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (ধারা ১১/গ) মূল অপরাধ শুধু যৌতুক দাবি করা যৌতুকের জন্য মারধর/নির্যাতন করা শাস্তি (জেল) ১ থেকে ৫ বছর ২থেকে ৫ বছর (সশ্রম) শাস্তি (জরিমানা) সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা জেলের সাথে অতিরিক্ত জরিমানা জামিন জামিন যোগ্য নয়, তবে জামিন পাওয়া যায় জামিনযোগ্য নয় আপোষ করা যায় আপোষযোগ্য নয় বিচার কোথায় হয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল কোথায়, কিভাবে এবং কোন আইনে মামলা করবেন? আইনি সুরক্ষা পেতে হলে, ঠিক কী ঘটেছে তার ওপর ভিত্তি করে সঠিক আইন বাছাই করতে হবে এবং সঠিক জায়গায় অভিযোগ জানাতে হবে। আসুন দেখি কখন, কোথায় এবং কোন আইনের সাহায্য নেবেন: পরিস্থিতি ১: শুধু যৌতুক দাবি করা হয়েছে (কোনো মারধর বা নির্যাতন হয়নি)   :    কোন আইন প্রযোজ্য? যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ (ধারা ৩)। কারণ এখানে মূল অপরাধ হলো যৌতুক “দাবি” করা। কোথায় ও কিভাবে অভিযোগ করবেন?   বিকল্প ১: আপনার নিকটস্থ থানায় গিয়ে লিখিত এজাহার (FIR) দাখিল করতে পারেন। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করবে। বিকল্প ২: আপনি সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (প্রথম শ্রেণীর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট) নালিশি মামলা দায়ের করতে পারেন। এতে পুলিশের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। পরিস্থিতি ২: যৌতুকের জন্য মারধর, শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে: কোন আইন প্রযোজ্য? নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (ধারা ১১)। কারণ এখানে দাবির পাশাপাশি “নির্যাতন” বা “জখম” ঘটানো হয়েছে। (সাধারণ মারধরের জন্য ধারা ১১(গ), প্রযোজ্য)।  কোথায় ও কিভাবে অভিযোগ করবেন? বিকল্প ১: যত দ্রুত সম্ভব থানায় গিয়ে বিস্তারিত জানিয়ে এজাহার (FIR) দায়ের করুন। পুলিশ তদন্ত করে মামলাটি বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠাবে। (নির্যাতনের শিকার হলে দ্রুত ডাক্তারি পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি)। বিকল্প ২: আপনি চাইলে থানার মাধ্যমে না গিয়ে, সরাসরি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন (এই আইনের ২৭ ধারা অনুযায়ী)। এক্ষেত্রে নির্যাতনের সপক্ষে প্রমাণ (যেমন ডাক্তারের সার্টিফিকেট, ঘটনার সাক্ষী) আদালতে উপস্থাপন করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ টিপস  ১ যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা – দাবির রেকর্ড (অডিও/ভিডিও/লিখিত) থাকলে মামলা শক্তিশালী হয়। -মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।২।. ধারা ১১/গ এ মামলা (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ )– নির্যাতনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে মেডিকেল পরীক্ষা করান। থানার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা এনজিওর সহায়তা নিন।– বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ আইন থাকলেও যৌতুকের অভিশাপ সমাজ থেকে পুরোপুরি মুছে যায়নি। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর (যেমন আইন ও সালিশ কেন্দ্র – ASK, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ) তথ্যমতে, যৌতুকের জন্য সহিংসতা এখনও ঘটে চলেছে। এর পেছনের কিছু কারণ:                          সামাজিক লজ্জা: অনেকে সম্মানহানির ভয়ে বা পরিবারের চাপে অভিযোগ করতে চান না।   – ৬৭% ক্ষেত্রে পরিবার মামলা করতে চায় না (সোশ্যাল স্টিগমা) প্রমাণের সমস্যা: বিশেষ করে শুধু দাবির ক্ষেত্রে বা পরোক্ষ চাপের ক্ষেত্রে প্রমাণ জোগাড় করা কঠিন হয়। ৪০% মামলা প্রমাণের অভাবে খারিজ হয়                                                                                                              দীর্ঘসূত্রিতা: বিচার পেতে অনেক সময় লেগে যায়। গড়ে ১,৪২০ দিন লাগে একটি মামলা নিষ্পত্তিতে। আসুন, রুখে দাঁড়াই যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি। শুধু আইন দিয়ে একে নির্মূল করা কঠিন। প্রয়োজন আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। মনে রাখবেন, আপনার নীরবতা অপরাধীকে আরও সাহস যোগায়। যৌতুকের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন, একটি সুন্দর ও নিরাপদ সমাজ গড়তে সাহায্য করুন। তথ্যসূত্র: ১। যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ ২। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধনী সহ) ৩।ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ ৪। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (ASK), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদন।

বাংলাদেশের যৌতুক নিরোধ আইন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের যৌতুক এর জন্য নির্যাতন সম্পর্কিত ধারার বিশ্লেষন Read Post »

আমাদের সকল আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

You have been successfully Subscribed! Ops! Something went wrong, please try again.

আইন, অধিকার ও আইনী পরামর্শ।

আমাদের সম্পর্কে

কপিরাইট নোটিস

ট্রেড লাইসেন্স নংঃ ২৪০০৮৮২৫০১৯০০৭৩৮৯

ডিবিআইডি: ২৮৮৬৬৬৪৬০

গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক

যোগাযোগ করুন

আমাদের ফলো করুন:

আইনকথন.কম © ২০২৪ ডেভেলপার আতিকুর রহমান

Scroll to Top